শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাংলাদেশি তরুণকে গুলি করে হত্যা নিউইয়র্ক পুলিশের

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

বাংলাদেশি তরুণকে গুলি করে হত্যা নিউইয়র্ক পুলিশের

উইন রোজারিও

মা ও ছোট ভাইয়ের সামনেই নিউইয়র্ক পুলিশ বাংলাদেশি তরুণ উইন রোজারিওকে (১৯) গুলি করে হত্যা করেছে।

স্থানীয় সময় বুধবার বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ওজোন পার্কে ১০৩ স্ট্রিট/১০১ এভিনিউর বাসায় এ ঘটনা ঘটে। রোজারিওর বাড়ি গাজীপুরে।

পুলিশ দাবি করেছে, ‘রোজারিও পুলিশের দিকে কাঁচি নিয়ে আঘাতের জন্য অগ্রসর হয়েছিল এবং তাকে আত্মসমর্পণ করতে বললেও করেনি। সে মানসিকভাবে সুস্থ ছিল না।’ অন্যদিকে রোজারিওর মা ইভা কোস্টা (৪৯) জানান, তার ছেলে পুলিশের দিকে কাঁচি হাতে ধাওয়া করেনি। পুলিশের বডি ক্যামেরা পরীক্ষা করলেই তা স্পষ্ট হবে।’

এ ব্যাপারে এদিন সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘ওই বাসা থেকে উইন রোজারিও নিজেই পুলিশের হটলাইনে (৯১১) কল করে দ্রুত সহায়তা চেয়েছিল। সে অনুযায়ী পুলিশের দুই অফিসার দুই মিনিটের মধ্যেই বাসায় যায়। তখন উইন রোজারিওর মানসিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছিল। পুলিশ তাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠাতে চাইছিল। কিন্তু উইন রোজারিও ড্রয়ার থেকে ধারালো কাঁচি বের করে পুলিশের দিকে ধেয়ে আসে। তখন শান্ত করার চেষ্টা করলে সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েকটি কাঁচি হাতে নেয় এবং পুলিশের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করে। আত্মসমর্পণ না করায় শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাকে গুলি করতে বাধ্য হয়। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে অ্যাম্বুলেন্সে নিকটস্থ জ্যামাইকা হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।’ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়, ‘উইন রোজারিওকে ঠেকাতে দুই পুলিশ অফিসার টেজার (আত্মরক্ষার প্রাথমিক অস্ত্র) প্রয়োগের চেষ্টা করলে তার মা সেটি প্রতিহত করেন।’ তবে পুলিশের এ দাবি সত্য নয় বলে জানান ইভা কোস্টা। তিনি বলেন, ‘উইন পুলিশের কাছে ধরা দিতে চায়নি। সে কেবল তাকে জড়িয়ে ধরে পুলিশের হাত থেকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিল।’ ইভা কোস্টা জানিয়েছেন, তার ছেলেকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এর বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘উইন রোজারিও মার্কিন সেনাবাহিনীতে ভর্তির অপেক্ষায় ছিল। ইন্টারভিউতে টিকে গেছে। মানসিকভাবে সে সুস্থ না থাকলে ইন্টারভিউতে টেকে কীভাবে?’ পুলিশের চিফ অব প্যাট্রোল জন সেল বলেন, ‘দুই অফিসার ওই বাসায় গিয়েছিলেন জরুরি সহায়তার জন্য। এ সময় তরুণের মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।’ তিনি দাবি করেন, ‘উইন রোজারিও যদি পুলিশের কথামতো আত্মসমর্পণ করতেন তাহলে এমন পরিস্থিতির অবতারণা হতো না।’

উইন রোজারিওর ব্যাপারে জ্যাকসন হাইটসসংলগ্ন লুথারেন চার্চের প্যাস্টর জেমস রয় বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই মা-বাবার সঙ্গে উইন রোজারিওকে চার্চে দেখেছি। আমি তাকে শিশুকাল থেকেই দেখছি। তাকে কখনো অস্থির হয়ে কোনো বাজে কাজে লিপ্ত হতে দেখিনি বা শুনিনি। তার এ অকালমৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আমি নিজেও তাকে মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদানের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কারণ তার শরীরকাঠামো অত্যন্ত উপযোগী ছিল।’ উল্লেখ্য, উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও (৫২) জেএফকে এয়ারপোর্টে কাজ করেন। গাজীপুরের সন্তান ফ্রান্সিস সপরিবার যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ২০১৪ সালে। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই জেএফকে এয়ারপোর্টে চাকরি করেন। তারা পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তানের এমন মৃত্যুর জন্য দায়ী পুলিশ অফিসারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। কমিউনিটির লোকজনও দুই পুলিশ অফিসারের বডি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটা পরীক্ষা করা হলেই পুলিশের দাবির সত্যতা সম্পর্কে জানা যাবে। সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী, এ ঘটনায় এনওয়াইপিডির ফোর্স ডিভিশন ইউনিটের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত দুই অফিসারের অস্ত্র জমা নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর