শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ-চীন

মুক্তবাণিজ্যের সমীক্ষা প্রতিবেদন হস্তান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীনের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যে চুক্তির প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে বিনিয়োগ আকর্ষণ। দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক চীনের পক্ষে। অর্থাৎ দেশটি বাংলাদেশ থেকে আমদানির প্রায় ২০ গুণ রপ্তানি করে। দ্বিপক্ষীয় এই বাণিজ্য বৈষম্য কমাতে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণকেই লক্ষ্য ধরেছে সরকার। দুই দেশের মধ্যে এফটিএ নিয়ে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ-চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করতে নিজ নিজ সমীক্ষা প্রতিবেদন (ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট) একে অন্যের কাছে হস্তান্তর করেছে। গতকাল দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করবেন। এ-সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে চীনের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। এখন চীন বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ। এফটিএ সই হওয়ার পর বিনিয়োগ আরও বাড়বে। বাংলাদেশ চীনে আম, কাঁঠাল, আলু, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করতে পারে। চীন বর্তমানে ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশকে। তবে এই সুবিধার পরও দেশটিতে রপ্তানি বাড়াতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীনে ৬৭৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। বিপরীতে চীন থেকে ২২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে এই বৈষম্য কমানোর জন্য এখন মুক্ত বাণিজ্যের পথে হাঁটছে দেশ দুটি। তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা প্রধানত তৈরি পোশাক রপ্তানি করি। চীনে ৪০ কোটি মানুষ। সেখানে যদি আমরা বৈচিত্র্যময় পণ্য নিয়ে যেতে পারি তবে সেটা হতে পারে বিশাল বাজার। এফটিএ হয়ে গেলে বিনিয়োগ বাড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে আমরা সেখানে চামড়া রপ্তানি করছি। মানসম্পন্ন চামড়া নিয়ে যেতে পারলে রপ্তানি আয় বাড়বে। এ ছাড়া পাটজাত পণ্য হস্তশিল্পের প্রতিও চীনের আগ্রহ রয়েছে। চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যের লাভ-ক্ষতি নিয়ে সমীক্ষা প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। প্রাপ্ত সমীক্ষা পর্যালোচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, (১) চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে বাংলাদেশের (আমদানি) রাজস্ব আয় কমবে; (২) তুলনামূলক সস্তা শ্রমশক্তির কারণে সেবা ও বাণিজ্য খাতে চীনা বিনিয়োগ বাড়বে; (৩) ১৮ কোটি ভোক্তার বাজার ধরতে  ে খাতেও আসতে পারে চীনের জায়ান্ট কোম্পানিগুলো; (৪) প্রতিযোগিতার কারণে দেশিয় শিল্পের সক্ষমতা বাড়বে এবং (৫) চামড়া, পাট ও পোশাকজাতীয় পণ্যের রপ্তানি বাড়বে। 

কর্মকর্তারা জানান, চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। যেহেতু দেশটি থেকে আমদানির পরিমাণ বেশি, তাই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে আমদানি খাত থেকে রাজস্ব আয় কমে যাবে এটিই স্বাভাবিক। তবে শুধু রাজস্ব আয়কে ভিত্তি ধরে বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনা করা যাবে না। বাণিজ্যের পাশাপাশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও উৎপাদন সক্ষমতাকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করতে হবে। কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হচ্ছে। এসব অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে চীন থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসবে। এ ছাড়া বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলোর মতো চীনের লেবার ইস্যু বা ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে মাথাব্যথা নেই। মেধাস্বত্ব নিয়ে তাদের শর্ত আছে। এটি উভয় দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের উৎপাদনশীল খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করতে পারে দেশটি। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, সেবা খাত ও  ই-কমার্স বাণিজ্যেও বিশ্বে অগ্রগামী চীন। এরই মধ্যে বাংলাদেশের  ই-কমার্স বাণিজ্যে বিনিয়োগ করেছে চীনের মালিকানাধীন বিশ্বের অন্যতম একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। আরও একাধিক বড় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বাণিজ্য বাড়াতে আলোচনা করছে। সেবা খাতের বাণিজ্যেও তাদের আগ্রহ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর