শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

হঠাৎ উত্তাল বুয়েট

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

হঠাৎ উত্তাল বুয়েট

মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের প্রতিবাদে গতকাল উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে করেন বিক্ষোভ, সংবাদ সম্মেলন। অবস্থান নেন প্রশাসনিক ভবনের সামনে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের বিক্ষোভ। সেখানেই তারা ইফতার করেন। ইফতারের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপাচার্য সেখানে যান। চলমান আন্দোলন গতকালের মতো শেষ হলেও শিক্ষার্থীরা তাদের বেঁধে দেওয়া সময়ের ব্যাপারে অনড়। আজ সকাল ৮টায় তারা আবারও বুয়েট শহীদ মিনারে জড়ো হবেন।

২০১৯ সালে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বুয়েট ক্যাম্পাসে। বুধবার মধ্যরাতে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের একটি বহর বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। গতকাল বিকালে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে আজ ও পরের দিনের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি পাঁচ দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো : বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে বুধবার (২৮ মার্চ) মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হলের আসন বাতিল; ওই ঘটনায় রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যে শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিলেন, তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার; যেসব বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এবং তারা কেন কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেলেন, সে ব্যাপারে বুয়েট প্রশাসনের সুস্পষ্ট সদুত্তর ও জবাবদিহি; প্রথম দুটি দাবি দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন না হলে ডিএসডব্লিউর পদত্যাগ এবং আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া। সংবাদ সম্মেলনের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ চলে। সেখানেই তারা ইফতার করেন। ইফতারের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে বুয়েটের উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার সেখানে যান। এ সময় সহ-উপাচার্য আবদুল জব্বার খান, ডিএসডব্লিউ মিজানুর রহমান প্রমুখ তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

উপাচার্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা যে লিখিত দাবি দিয়েছ, সেখানে কাউকে অ্যাড্রেস করা হয়নি। কারও নাম নেই, স্বাক্ষরও নেই। এটার ওপর কীভাবে ব্যবস্থা নেব? তারপরও আমি নিজে এসে কথা বলছি, কারণ তোমরা আমার ছাত্র। ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ঘটনার পর আমাদের কাছে রিপোর্ট করতে পারতে।’

এরপর উপাচার্য শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কথা বলেন। তিনি ইমতিয়াজ রাব্বির হলের সিট বাতিল করার ঘোষণা দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে ওঠেন। উপাচার্য বলেন, কাউকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। বহিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আজই গ্রহণ করা হবে। দ্বিতীয় দাবি প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, সেটির বিষয়ে তদন্ত কমিটি আজই করা হবে। চতুর্থ দাবি অনুযায়ী বুয়েটে প্রবেশ করা বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারা কারা, খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি করা হবে।

একপর্যায়ে আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ফটক খুলে দিতে ডিএসডব্লিউর অনুমতি ছিল। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে থাকা ডিএসডব্লিউ মিজানুর রহমান প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন।

শিক্ষার্থীরা থামলে উপাচার্য বলেন, অনুমতি ছিল কি ছিল না, সেটা তদন্ত কমিটি দেখবে। তখন ডিএসডব্লিউ বলেন, ‘আমি কাউকে এ ধরনের অনুমতি দিইনি। আন্দাজে কথা বললে হবে না। বুয়েট ক্যাফেটেরিয়া বা সেমিনার কক্ষ ব্যবহার করতে ডিএসডব্লিউ কার্যালয়ের মাধ্যমে অনুমতি নিতে হয়। তোমরা যে ঘটনার কথা বলছ, সেখানে কার্যালয়ের জন্য কেউ আবেদন করেনি, কাউকে অনুমতিও দেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব ডিএসডব্লিউর নয়।

তখন উপাচার্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, এক নম্বর দাবির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হবে। দুই নম্বর দাবি অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এজন্য উপাচার্য সময় চান এবং শিক্ষার্থীদের আজ পরীক্ষায় বসতে অনুরোধ জানান। এরপর উপাচার্যসহ পদস্থ শিক্ষকরা চলে যান। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গতকালের মতো বিক্ষোভ শেষ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর