শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিয়াম-সাধনার বৈশিষ্ট্য ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

সিয়াম-সাধনার বৈশিষ্ট্য ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা

প্রত্যেক রোজাদারের দায়িত্ব হলো, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাতলানো পথ অনুসরণ ও অনুকরণ করে রমজানে সিয়াম-সাধনার মাধ্যমে জীবনের পাপ-পঙ্কিলতা মার্জনার পূর্ণ চেষ্টা করে আত্মার পরিপূর্ণ পরিশুদ্ধি করা। হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে সওয়াবের নিয়তে রমজানে রাত জাগরণ করে (তারাবি ও তাহাজ্জুদ পড়ে), আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সব পাপ মাফ করে দেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২০২)’। উল্লিখিত হাদিস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহর দেওয়া সব অঙ্গীকারকে সত্যজ্ঞান করে সঠিক জেনে, মনে প্রাণে বিশ্বাস করে তা বাস্তবায়ন করা এবং প্রতিটি কাজে আল্লাহর কাছে সওয়াবের প্রত্যাশা করা; একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা করা, সব কাজের আগে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়টি স্মরণে রাখা। আল্লাহপাক সর্বাবস্থায় সব কিছু দেখেন ও জানেন এর বিশ্বাস মনেপ্রাণে লালন করা। কারণ ইয়াকিন ও বিশ্বাস একজন বিশ্বাসীর সম্মানকে উঁচু করে দেয়। তাকে সম্মানের আসনে নিয়ে যায় এবং একনিষ্ঠভাবে সিয়াম-সাধনা পালন একজন রোজাদারকে বহু পুরস্কারে ভূষিত করে। পুরস্কার পাওয়া যাবে স্বয়ং রব্বুল আলামিনের কাছ থেকে। যেমন তিনি নিজেই ইরশাদ করেছেন, ‘আসসাওমু লী ওয়াআনা আজযী বী’ রোজা আমার জন্য আমি নিজেই রোজাদারের পুরস্কার দেব। সুবহানাল্লাহু। তাই রোজা পালন হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য, সামাজিক লজ্জার ভয়ে নয়। কারণ পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ম হিসেবে রোজা রাখলে তাতে কোনো বরকত থাকে না। আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে না। আমরা অনেক সময় দেখি, মানুষ অসুস্থ হলে পানাহার ত্যাগ করে, সফরেও খাবারের সংকট থাকে বিধায় হিসাব করে খাবার গ্রহণ করে। এতে রোজা পালন হয় না। মূলত রোজার উদ্দেশ্য শুধু পানাহার ত্যাগ করা নয়। রোজার মূল্য উদ্দেশ্য আল্লাহর নির্দেশ মান্য করা। তিনি যা কিছু ত্যাগ করতে বলেছেন তা ছেড়ে দেওয়া। রোজাদার যখন বিশ্বাস করবে- আল্লাহ যা বলেছেন আমার কল্যাণের জন্যই বলেছেন, তিনি আমাকে প্রতিদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং আমি অবশ্যই তাঁর সেই প্রতিদান পাচ্ছি, তখন সে আত্মিক প্রশান্তি খুঁজে পাবে। মনে রাখতে হবে খাঁটি ও বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া ইবাদত অর্থহীন। সুতরাং রোজা পালনে আল্লাহর সন্তুষ্টির বিষয়টি সবসময় স্মরণে রাখা আবশ্যক। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই-রোজা ছাড়া। তা আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। আর রোজাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের ঘ্রাণের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯২৭)। ওই হাদিস দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, বান্দা যখন আল্লাহর জন্য তার সব প্রিয় জিনিস ত্যাগ করে, এ জন্য আল্লাহ নিজেই বান্দা-বান্দিকে এর প্রতিদান দেবেন। সুবহানাল্লাহু। দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম পালনে অবশিষ্ট ১১ মাসের ইবাদতের প্রতি শক্তি জোগায়, রোজার কারণে অন্যান্য ইবাদতের প্রতি আগ্রহ জন্ম নেয়, তাতে প্রশান্তি মেলে। কারণ রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। রোজার মাধ্যমে মানুষ রিপু ও প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের শক্তি পায় এবং তা সহজ হয়ে যায়, শরিয়তের ওপর চলার আগ্রহ তৈরি হয়, ইবাদতে তৃপ্তি এনে দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল পূর্ববর্তীদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)।

তাকওয়ার মূল দাবি সম্পর্কে হজরত ওলামায়ে কিরাম বলেছেন, তাকওয়ার সারমর্ম হলো, এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া যে আল্লাহ কোন কাজে সন্তুষ্ট হবেন বা কোন কাজে অসন্তুষ্ট হবেন, কোন কাজ বৈধ করেছেন এবং কোন কাজ অবৈধ করেছেন- এ ব্যাপারে পরিপূর্ণ সজাগ থাকা। আল্লাহর হুকুমগুলো মান্য করা। নিষিদ্ধ বিষয় থেকে দূরে বহু দূরে থাকা। পবিত্র মাহে রমজানে দীর্ঘ এক মাস যখন মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বিষয়গুলো মেনে চলবে, পাপ-পঙ্কিলতা ও হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করবে, তখন তা তার অভ্যাসে পরিণত হবে। এ জন্য রমজানে নেকির কাজ বেশি বেশি করা। গুনাহ ও পাপের কাজ পরিহার করা। রমজানে কোনো ব্যক্তি ভালো কাজের আগ্রহ এবং মন্দ কাজ ত্যাগ করার অনুশীলন করলে তার জীবন বদলে যাবে ইনশাআল্লাহ। আর কেউ যদি রোজা রেখে পাপ পরিহার করতে না পারে তার ব্যাপারে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘোষণা হলোথ- ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা, মিথ্যা অনুযায়ী চলা বর্জন না করে, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)। সিয়াম সাধনা পালনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, রোজাদার রোজার মাধ্যমে আল্লাহমুখী হয়। আর বান্দা আল্লাহমুখী হয় নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, আল্লাহর জিকির, তেলাওয়াত, ধ্যান, তাহাজ্জুদ, নফল ইবাদত ইত্যাদির মাধ্যমে। মহান রব্বে কারিম আমাদেরকে মাহে রমজানে আল্লাহর বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ খবর