শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

খোঁজ নেই মোস্ট ওয়ান্টেড ৬৪ আসামির

বছরের পর বছর ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে ঝুলছে নাম

মাহবুব মমতাজী

বছরের পর বছর ধরে খোঁজ মিলছে না পুলিশের লাল তালিকাভুক্ত মোস্ট ওয়ান্টেড ৬৪ আসামির। পুলিশের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা এসব আসামির বিষয়ে সেসব দেশের পুলিশের কাছ থেকে যথাযথ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ঝুলছে বাংলাদেশের পলাতক ৬৪ শীর্ষ অপরাধীর নাম ও ছবি। এ তালিকায় রয়েছে- যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, জাল নোট ব্যবসায়ী, পর্নো ছবির ব্যবসায়ী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তরা। মাঝে মধ্যে রেড নোটিস বা লাল তালিকাভুক্ত এসব ৬৪ অপরাধীর মধ্যে দুয়েকজন ভারত, দুবাই, নেপালে অবস্থানের খবর পেলেও ফেরত আনতে পারেনি পুলিশ। তবে এদের কারও সুনির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে জানে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ২০২০ সালে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের পর মানব পাচারকারীদের ধরতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতারে রেড নোটিস জারি করেছে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

এদিকে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০২২ সাল পর্যন্ত মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় ৬৩ আসামির নাম ছিল। ওই তালিকা থেকে তিনজনের নাম বাদ পড়েছে। নতুন চারজনের নাম যুক্ত হয়েছে। বাকি সব পুরনোই তালিকাতে রয়েছে। বাদ পড়াদের মধ্যে আছে হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ। তার বাড়ি ঢাকার সাভারে। তিনি একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এ ছাড়া বাংলাদেশে জঙ্গিবাদে মদত দেওয়া, অস্ত্র ব্যবসা, প্রতারণা ও অর্থ পাচারের অভিযোগে পলাতক শহিদ উদ্দিন খান এবং রউফ উদ্দিনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সূত্র জানায়, পুলিশ বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কোনো ইউনিট যদি মনে করে তার আসামি বিদেশে পালিয়ে আছে এবং ফিরিয়ে আনা জরুরি, তখন তার বিষয়ে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে ইন্টারপোলের কিছু নিয়ম আছে। সেগুলো মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। ইন্টারপোলের রেড নোটিসে অপরাধীদের বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর তথ্য হালনাগাদ করা হয়ে থাকে। তবে ওইসব অপরাধীর সম্ভাব্য অবস্থান জানার পর সেই দেশের এনসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সেই দেশের এনসিবি থেকে যথাযথ তথ্য পাওয়া যায় না। পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন) মো. আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ওই ৬৪ আসামির কোনো খোঁজখবর এখনো ইন্টারপোল থেকে পাওয়া যায়নি। তবে তারা প্রতিনিয়ত তাদের বিষয়ে জানতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ইন্টারপোলের রেড নোটিসভুক্ত ৬৪ আসামি হলেন- রাজু ঢালী, বাড়ি চাঁদপুর সদরের ফরক্কাবাদে। তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। মো. মিলন, বাড়ি ঢাকাতেই। তারও বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। লিটন বেপারি, বাড়ি ঢাকায়। তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা আছে। রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান, বাড়ি বাগেরহাট জেলায়। তার বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার অভিযোগে মামলা রয়েছে। জাফর ইকবাল, বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। তার বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে মানব পাচারের পাশাপাশি হত্যার অভিযোগ রয়েছে। তানজিরুল, বাড়ি কিশোরগঞ্জ। তারও বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে মানব পাচারের পাশাপাশি হত্যার অভিযোগ রয়েছে। স্বপন, বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তার বিরুদ্ধে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচারের পর হত্যার অভিযোগ রয়েছে। মোল্লা নজরুল ইসলাম, বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। তার বিরুদ্ধে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচারের পর হত্যার অভিযোগ রয়েছে। মিন্টু মিয়া, বাড়ি কিশোরগঞ্জ। তার বিরুদ্ধে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচারের পর হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ওয়াসিম, বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফির ব্যবসা এবং মোবাইলফোনে পর্নোছবি ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। খোরশেদ আলম, বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যার উদ্দেশে গুরুতর আঘাতের অভিযোগ রয়েছে। গিয়াস উদ্দিন, বাড়ির কোনো তথ্য জানতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার এবং মানুষকে আঘাতের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অশোক কুমার দাস, বাড়ি চট্টগ্রামে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সহিংসতা সৃষ্টি এবং শারীরিক নির্যাতনের। মিজান মিয়া, বাড়ি নোয়াখালী। তার বিরুদ্ধে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। চন্দন কুমার রায়, বাড়ি গাইবান্ধা। হত্যা, ষড়যন্ত্র এবং কিছু ব্যক্তির অভিন্ন স্বার্থ রক্ষায় আইনবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার একাধিক অপরাধে অভিযুক্ত। রাতুল আহমেদ বাবু, বাড়ি টাঙ্গাইল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আওয়ামী লীগের জনসভায় হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটানো এবং হত্যার। লালু মো. সিরাজ মোস্তফা, বাড়ি নাটোর জেলায়। তার বিরুদ্ধে অভিবাসী পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। হারিছ চৌধুরী, তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে আত্মগোপনে চলে যান হারিছ চৌধুরী। এরপর থেকে তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারি করা হয়। ১৪ বছর ধরে এ নোটিস ঝুলছে। তবে তার স্বজনরা দাবি করেছেন, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর হারিছ চৌধুরী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা গেছেন। তাকে ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের জালালাবাদের কমলাপুর এলাকায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যিন মাদরাসার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। জাহিদ হোসেন খোকন, বাড়ি ফরিদপুরের নগরকান্দায়। তিনি নগরকান্দার পৌর মেয়র ছিলেন এবং পলাতক বিএনপি নেতা। তার বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধসহ হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তর ও দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো ১১টি অভিযোগ রয়েছে। সৈয়দ মো. হোসেন, বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তার বিরুদ্ধে একাত্তরে ৬৮ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা এবং আড়াইশর বেশি ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া হত্যা, লুটপাট ও নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। সৈয়দ মো. হাচান আলী, বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। তিনি হত্যা, লুটপাট ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। আজিজুর রহমান, বাড়ি খুলনা জেলায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, জাল নোট সরবরাহ, ব্যবসা এবং তৈরির। তরিকুল ইসলাম, বাড়ি নওগাঁ জেলায়। তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ, জাল নোট সরবরাহ, ব্যবসা এবং তৈরির। এ তালিকায় আরও আছেন- অজয় বিশ্বাস, আবদুল জব্বার, হানিফ, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ সবুজ ফকির, মোহাম্মদ মনির ভূঁইয়া, শফিক-উল, আমান উল্লাহ শফিক, আবুল কালাম আজাদ, জাহিদুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন খান, নাঈম খান ইকরাম, কালা জাহাঙ্গীর ওরফে ফেরদৌস, ইউসুফ, আবদুল আলিম শরিফ, আহমেদ মজনু, নুরুল দীপু, মোহাম্মদ ফজলুল আমিন জাভেদ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুর রশিদ খন্দকার, শরিফুল হক ডালিম ও এএম রাশেদ চৌধুরী, নাজমুল আনসার, আহমেদ শরিফুল হোসেন, মোসলেম উদ্দিন খান, মোহাম্মদ আতাউর রহমান চৌধুরী, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দিন মিয়া, সালাহউদ্দিন মিন্টু, সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভি, হারুন শেখ, সুলতান সাজিদ, তৌফিক আলম, জাফর আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, আমিনুর রসুল, খন্দকার তারভীর ইসলাম জয়, নবী হোসেন, আবদুল জব্বার, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ, সুব্রত বাইন এবং প্রকাশ কুমার বিশ্বাস।

সর্বশেষ খবর