রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বনের সাজ্জাদের বিরুদ্ধে শেষ নেই অভিযোগের

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

বনের সাজ্জাদের বিরুদ্ধে শেষ নেই অভিযোগের

বন বিভাগে চাকরি করেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন ঢাকা সামাজিক বন-বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ক্রিম। অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ ও ঘুষ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা অর্জন করছেন তিনি। অবৈধ পন্থায় অর্জিত টাকা দিয়ে নিজ গ্রাম শাহজাদপুরের কাদল মাদাইয়ে ছয় তলা বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে এক তলার কাজ শেষ করেছেন। এ ছাড়াও ঢাকার উত্তরায় কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন।

সরেজমিন ও তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের মাদল-কাদাই গ্রামের এস এম সাজ্জাদ হোসেনের বাবা আবু বকর ছিলেন বেলতৈল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন ক্রিম সবার ছোট। ২১তম বিসিএস পাস করে সাজ্জাদ হোসেন বন বিভাগে যোগ দেন। সুন্দরবনসহ বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে ঢাকার মহাখালী বন ভবনে সামাজিক বন বিভাগের ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাদল মাদাই গ্রামের লোকজন বলছেন, আমাদের গ্রামের সন্তানদের চাকরি দেওয়ার অনুরোধ করলেও গ্রামের কোনো মানুষের সে চাকরি বা কোনো কাজ করে দেয়নি। চাকরি বা কাজ করে দিলে মনে করেন টাকা কম দিব এ জন্য ফিরিয়ে দিয়েছেন। তবে অন্যান্য জেলার বিভিন্ন লোককে বন বিভাগে চাকরি বা কাজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়াও শুনেছি, বন বিভাগে নাকি নানা রকম ঘুষের সুযোগ রয়েছে। সেখান থেকে প্রচুর টাকা ইনকাম করছেন তিনি। এসব টাকা দিয়েই বাড়িতে ছয় তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বিল্ডিং করছেন। ইতোমধ্যে এক তলা কমপ্লিট করেছেন। রাস্তা না থাকায় বাড়িতে সরাসরি গাড়ি যায় না। এ জন্য সাজ্জাদ হোসেন ও তার আরেক চাচাতো ভাই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সরকার থেকে কোটি টাকার রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প পাস করিয়ে নিয়েছেন। অল্পদিনের মধ্যেই সে রাস্তার কাজ শুরু হবে। এ ছাড়াও তিনি গ্রামে যখন আসেন তখন গ্রামে রাজকীয় হালে চলাফেরা করেন। গ্রামের লোকজনকে সহায়তাসহ মসজিদ মাদরাসাতেও প্রচুর টাকা দিয়ে থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বনবিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, স্যার ভালো। তবে তার সাধ্যের মধ্যে কাজ থাকলে এবং মনঃপূত টাকা হলে তিনি সে কাজ করে দেন।

তার বড় ভাই স্থানীয় স্কুল শিক্ষক পাপ্পু মাস্টার জানান, বাড়িতে ছয় তলা বিল্ডিং নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তরের সময় কথা ছিল পাঁচ ভাইয়ের সবাই এক তলা করে ব্যবহার করবে। কিন্তু সে কৌশলে এমনভাবে বিল্ডিংটি নির্মাণ করেছে- যাতে আমরা ওই বিল্ডিংয়ের কোনো তলা ব্যবহার করতে না পারি। তাছাড়া ভাই সাজ্জাদ হোসেন উত্তরাতে একটি ফ্ল্যাট বাসাও কিনেছেন। সেখানে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে থাকেন। তিনি জানান, সাজ্জাদ হোসেন মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়িতে এলে তার নির্মাণাধীন বাড়িতেই থাকেন। সংবাদকর্মী পরিচয় না দিয়ে চাকরি বা কাজের তদবির করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তার ভাই বলেন, ভাই দুঃখের কথা কী বলব? ভাই হয়েও আমাদের কোনো কথা রাখেন না? আমাদের কথায় কারও তদবির বা চাকরি দেন না। সে মনে করে আমরা টাকা দেব না, বা কম দেব। এ জন্য বলেন, আমি চাকরি বা কাজ করে দিতে পারব না। তবে আপনারা যদি চাকরি বা অন্য কোনো কাজ করিয়ে নিতে চান তবে জাহাঙ্গীর নামে বন বিভাগে এক ব্যক্তি রয়েছে তার মাধ্যমে গেলে আপনারা চাকরি বা কাজ করে নিতে পারবেন। আমি যতটুকু জানি অনেকেই তার মাধ্যমে টাকা দিয়ে চাকরিসহ বিভিন্ন কাজ করিয়ে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা সামাজিক বন-বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ক্রিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ খবর