শিরোনাম
রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

আর্থিক খাতের হুমকি খেলাপি ঋণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ দেশের আর্থিক খাতের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পর্যবেক্ষণ এমন এক সময়ে প্রকাশ করা হয়েছে যখন ঋণ বিতরণে অনিয়ম এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণের বিশাল বোঝা ব্যাংক খাতের ওপর।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের ৯ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, খেলাপি ঋণ ব্যাংকের স্থিতিশীলতা এবং মুনাফাকে প্রভাবিত করছে, মানুষের আস্থা নষ্ট করছে এবং আমানতের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। মুদ্রা ও বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণের নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাড়াতে গিয়ে মূলধন ঘাটতি হচ্ছে। খেলাপি ঋণ কমানো ছাড়া ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মূলধনের পর্যাপ্ততার কোনো উন্নতি হবে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয়কারীদের ব্যাংকে আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত করেছে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করা না গেলে সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে তারল্য সরবরাহ তার আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে ১৯ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়ে ১৯ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকায় উঠেছে। খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই গত মাসের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটিকে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে একটি রোডম্যাপ নিয়েছে। রোডম্যাপ অনুসারে, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমিয়ে ১০ শতাংশ ও বেসরকারি খাতে ৫ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সীমাতিরিক্ত, বেনামি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শূন্যে নামিয়ে আনার কথাও বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের বলেছিলেন, গত তিন বছরের শ্রেণিকৃত (খেলাপি) হওয়া ঋণের গতি প্রকৃতি আমরা বিশ্লেষণ করেছি। খেলাপি ঋণের গতি যে দিকে যাচ্ছে-তা দেখে আমরা মনে করছি তা ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা যাবে। ব্যাংকিং খাতের বেনামি ঋণ কীভাবে শনাক্ত ও এর সমাধান কীভাবে হবে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে বেনামি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ঋণ আছে তা আমরাও স্বীকার করি। এর পরিমাণ কত, তার তথ্য নেই। রোডম্যাপ বাস্তবায়নের সময় আমরা অনেক তথ্যই পাব। ব্যাংকের পরিচালকরা অন্য ব্যাংক থেকে প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিচ্ছে এবং এসব ঋণের জামানত পর্যাপ্ত নেই। আবার ঝুঁকিপূর্ণ এসব ঋণের একটি অংশ বেনামি। সেসব ঋণের পরিণতি বিষয়ে আরেক প্রশ্নে আবু ফরাহ বলেন, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পরিচালকদের নেওয়া ঋণের পরিমাণ এখন ২ লাখ কোটি টাকার ওপরে। সঠিক তথ্য এই মুহূর্তে আমার মনে নেই। আমরা তাও দেখব।

 

সর্বশেষ খবর