রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

মিয়ানমারের আরও তিন সেনা এলেন পালিয়ে

কক্সবাজার ও বান্দরবান প্রতিনিধি

মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আরও তিন সদস্য। গতকাল ভোরে ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেন। খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা তাদের সঙ্গে থাকা অস্ত্র জমা নেওয়ার পর তিনজনকে হেফাজতে নেন। পরে তাদের বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন দফতরে নেওয়া হয়।

স্থানীয়দের দেওয়া এসব তথ্যের সত্যতা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি জানান, পালিয়ে তিনজনের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের এপারে রাখাইন থেকে থেমে থেমে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। মিয়ানমার জলসীমায় নাফ নদে দেশটির নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ টহল দিতে দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, শনিবার ভোর থেকে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ আধা ঘণ্টা পরপর শোনা যাচ্ছে। বিস্ফোরণে এপারের বাড়িঘর কেঁপে উঠছে। তিনি আরও বলেন, এর আগের দুই দিনও বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসার পাশাপাশি মিয়ানমার নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ তাদের জলসীমায় টহল দিতে দেখা গেছে। তবে গতকাল সেটি আর দেখা যায়নি।

নতুন করে মিয়ানমারের তিন সেনা পালিয়ে আসার ব্যাপারে বিজিবির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিনজনকে হেফাজতে নেওয়ার পর বিজিবি সদর দফতরে অবহিত করা হয়েছে। পরে বিস্তারিত বলা যাবে। নতুন অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে একজন সেনা সদস্য এবং দুজন সেদেশের বর্ডার গার্ড পুলিশের সদস্য।

এর আগে ১১ মার্চ নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১৭৯ সদস্য। তাদেরও নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ব্যাটালিয়ন দফতরে রাখা হয়েছে। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারও আগে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন ৩০২ জন বিজিপি সদস্যসহ মিয়ানমারের ৩৩০ জন নাগরিক। পরে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত পাঠায় বিজিবি।

সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) রাখাইন অঞ্চল দখল করতে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। গত দুই মাসে আরাকান আর্মি রাখাইনে হামলা চালিয়ে জান্তা সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীকে হটিয়ে রাখাইনের অধিকাংশ অঞ্চল, বিজিপি ক্যাম্প, সীমান্ত চৌকি ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ তাদের হেফাজতে নেয়। জান্তা বাহিনী সেসব বেদখল হওয়া এলাকা পুনরুদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সব সময় সতর্ক রয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর