মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলবে

♦ হাই কোর্টের আদেশ ♦ আপিলের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের ♦ রায় মানতে বাধ্য : উপাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলবে

বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। ছবি : সংগ্রহ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জারি করা ২০১৯ সালের বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেছেন হাই কোর্ট। একই সঙ্গে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। এ আদেশের ফলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে কোনো আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। গতকাল বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ। এর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট দায়ের করা হয়। বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বি  এ রিট দায়ের করেন। রিটে শিক্ষা সচিব, বুয়েটের ভিসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। তবে গতকাল বিকালে বুয়েটের এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেছেন, যে ছাত্র রাজনীতি র‌্যাগিং কালচার প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয় সে রাজনীতি কখনো ভালো ফল বয়ে আনবে না। বুয়েটের পরিবেশ ছাত্র রাজনীতিবিহীন অবস্থায়ই সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। উপাচার্যকে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আহ্বান জানাব আমরা। তারা বলেছেন, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

হাই কোর্টের আদেশের পর গতকাল বিকালে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, কোর্টের আদেশ শিরোধার্য। কোর্ট যেটা বলবেন সেটা আমাদের মানতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটে আর রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও যেন ক্ষুণ্ন না হয়-দুই দিক দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতে বলেছি বুয়েটের এ সিদ্ধান্ত দেশের সংবিধানের ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। তিনি বলেন, সমাবেশ করার, রাজনৈতিক দল করার ও বাকস্বাধীনতার অধিকার আমাদের মৌলিক অধিকার। তবে বুয়েটের অর্ডিন্যান্স ১৯৬১-এ ভিসি এবং প্রো-ভিসিকে একটা ক্ষমতা দেওয়া আছে, ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে পারবেন। এর ফলে তারা মিছিল-মিটিং করার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবেন। তবে কোনো সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা তাদের নেই। শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আদালত আমাদের বক্তব্য শুনে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে জারি করা নোটিস স্থগিত করে দিয়েছেন এবং এ নোটিস কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। এ আদেশের ফলে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি করতে আর কোনো বাধা রইল না। আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বুয়েটের শহীদ মিনারসংলগ্ন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সমমনা একদল শিক্ষার্থী। গতকাল বিকালে শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সেখানে তারা কিছুক্ষণ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানও দেন। ছাত্রলীগের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও বুয়েটের সদ্যসাবেক ছাত্র হাসিন আজফারসহ ১১ শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। অন্য ১০ শিক্ষার্থীও ছাত্রলীগ সমর্থক বলে জানা গেছে। বুয়েটে আন্দোলনের নামে অচলাবস্থা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। গতকাল বুয়েট প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (আইইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান আইইবির সভাপতি ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা প্রকৌশলী আবদুস সবুর। এ সময় বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক বিভিন্ন নেতা উপস্থিত ছিলেন। ছাত্র রাজনীতি চালুর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বুয়েটে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান বন্ধসহ পাঁচ দাবি জানান আবদুস সবুর। হাই কোর্টের আদেশের পর বিকালে এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, বুয়েটের পরিবেশ ছাত্র রাজনীতিবিহীন অবস্থায়ই সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। আমরা নিজেদের দাবিতে অনড় রয়েছি। উপাচার্যকে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আহ্বান জানাব আমরা। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিজ্ঞপ্তি স্থগিতাদেশের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আগমন এবং শোডাউনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার লঙ্ঘন বলে মনে করে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের পর ৯ অক্টোবর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক প্রতিষ্ঠানেই তো সংগঠন করা নিষিদ্ধ আছে, বুয়েট যদি মনে করে তারা সেটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। সব শিক্ষার্থীর মতামত বিচার বিভাগে তুলে ধরতে বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যে ছাত্র রাজনীতি র‌্যাগিং কালচার প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদের তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না। ছাত্র রাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে নিয়ে বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাক্সক্ষা তা সব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপাচার্য পূরণ করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

নাম প্রকাশ না করে আন্দোলনে সরব থাকা এক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জারি করা বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করব। ক্যাম্পাসে কোনো বিক্ষোভ সমাবেশ না হলেও ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন চলবে।

 

সর্বশেষ খবর