মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিপুল সেনা হারালেও থামছে না ইসরায়েল

প্রতিদিন ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলি হামলার ১৭৫ দিন পর ফিলিস্তিন সরকারের তথ্য দফতর একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনি গেরিলাদের আক্রমণে হামলাকারী ইসরায়েলি বাহিনীর ৬ শতাধিক সেনা নিহত হয়েছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। এ ছাড়া ২ শতাধিক ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসে হামাস যোদ্ধারা। অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ) একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতেও একই নিহতের কথা স্বীকার করা হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় গত ১৮ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ২১ রোগী নিহত হয়েছেন। সূত্র : রয়টার্স, এক্সিওস, সিএনএন, আল জাজিরা। খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে প্রায় ছয় মাস ধরে নির্বিচারে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আক্রমণ চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এর জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। চলমান এই যুদ্ধে ৬০০ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের হামলায় নিহত সেনারাও রয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। তারা বলেছে, গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় অভিযানের সময় আরও এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। ২০ বছর বয়সী ওই সেনার নাম নাদাভ কোহেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে বলা হয়েছে, যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় এরই মধ্যে প্রায় ৩৩ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। জাতিসংঘ জানিয়েছে, দীর্ঘ এ সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে মানবিক সংকটে দিন পার করছেন ফিলিস্তিনিরা। এ ছাড়া খাবার, পানি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার অভাবে উপত্যকাটির ২৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা চরম ক্ষুধা ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছেন। গত রবিবার এক বিবৃতিতে গাজার আল-শিফা হাসপাতাল থেকে রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি অভিযানে অন্তত ২১ রোগী মারা গেছে। এক্সে দেওয়া পোস্টে আল-শিফা হাসপাতালে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন ডব্লিউএইচও প্রধান।

এদিকে ফিলিস্তিন সরকারের তথ্য দফতর যুদ্ধের ১৭৫ দিন পর হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় ২ হাজার ৮৮৮টি অপরাধ ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ হাজার ৬২৩ জন শহীদ ও নিখোঁজ। ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ রয়েছে। শহীদদের মধ্যে ১৪ হাজার ৩৫০ শিশু রয়েছে। ২৮টি শিশু অনাহারেও মারা গেছে। শহীদদের মধ্যে ৯ হাজার ৪৬০ জন নারী রয়েছে। ৩৬৪ জন মেডিকেল স্টাফও শহীদ হন। উদ্ধারকারী বাহিনীরও ৪৮ জন শহীদ হয়েছেন। ১৩৬ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৭৫ হাজার ৯২ জন। এই যুদ্ধে নিহতদের শতকরা ৭৩ ভাগ নারী ও শিশু। এ ছাড়া ২৭৪ জন চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। নাম জানা ১২ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গাজা উপত্যকার ২ মিলিয়ন বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ১৬৮টি সরকারি স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। ১০০টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। ৩০৫টি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২২৭টি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আরও ২৯৪টি মসজিদের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তিনটি চার্চ বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। গাজার মানুষের ওপর ৭০ হাজার টন বিস্ফোরক নিক্ষেপ করা হয়েছে। ২০০টি ঐতিহাসিক ও প্রাচীন স্থাপনা বোমা মেরে ধ্বংস করা হয়েছে।

বৈঠকে বসছে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদ স্থান রাফাহতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে দখলদার ইসরায়েল। তবে সেখানে হামলা না চালিয়ে বিকল্প কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে ব্যাপারে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। এ বৈঠকটি গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে হওয়ার কথা ছিল। তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো না দেওয়ায় বৈঠকটি বাতিল করেন নেতানিয়াহু। এরপর যুক্তরাষ্ট্র জানায়, নেতানিয়াহু বৈঠকটি আয়োজনের জন্য নতুন সময় চেয়ে তাদের কাছে আবেদন করেছেন। ইসরায়েলের হামলা থেকে বাঁচতে রাফাহতে বর্তমানে ১৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি অবস্থান নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, জনবহুল ওই অঞ্চলে যদি এখন কোনো ধরনের হামলা হয় তাহলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, যদি গাজায় হামাসকে তারা হারাতে চায় তাহলে রাফাহতে হামলা চালাতেই হবে।

গাজায় হিরোশিমা-নাগাসাকির মতো বোমা ফেলার আহ্বান : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পারমাণবিক বোমা ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান ও রিপাবলিকান পার্টির সদস্য টিম ওয়েলবার্গ। তিনি বলেছেন, জাপানে যেমন পারমাণবিক হামলার পর যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তেমনই গাজায় এ ধরনের হামলা হলে দ্রুত যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে।

এই কংগ্রেসম্যানের এমন মন্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর