মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ওষুধের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক সরকার

ঈদে বাড়তি ছুটি থাকবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বল্পোন্নত (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর ওষুধের দাম যেন না বাড়ে সে ব্যাপারে সতর্কতার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ঈদের ছুটি নিয়ে আলোচনা হয়। ওষুধের দাম নিয়ে আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপন করেন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন। বৈঠকের দায়িত্বশীল সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওষুধের দাম বাড়তে পারে উল্লেখ করে ক্রীড়ামন্ত্রী বৈঠকে বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরও কিছু সুযোগসুবিধা হারাবে। এতে কাঁচামালের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে এবং ওষুধের দাম অনেক বেড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা প্রয়োজন। বৈঠকের একাধিক সূত্র জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে শুনে আশ্বস্ত করেছেন এবং বলেছেন, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে, কথাবার্তা হয়েছে। এগুলো নিয়ে আমরা সতর্ক আছি যাতে কোনো সমস্যা না হয়। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ওষুধ শিল্প পার্কে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) প্রস্তুত না হওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। এ বিষয়ে পাপন জানান, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার কারণে এটি প্রস্তুত হচ্ছে না। তবে সভায় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু উভয়েই জানান তারা গ্যাস ও বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। জানা গেছে, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) যেসব সুযোগ রয়েছে তা ওষুধের ক্ষেত্রে না থাকলে ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বেশ কিছু ওষুধের ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব সুবিধা ভোগ করার জন্য বাড়তি শুল্ক প্রদান করতে হবে। এতে ওষুধের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন অনেকেই। বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক সাবেক সিনিয়র সচিব শরিফা খান গত মাসে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ডব্লিউটিওর যেসব সুযোগ রয়েছে তা ২০২৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। তবে ওষুধের ক্ষেত্রে থাকবে না। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য শুল্ক, ভর্তুকি পরিস্থিতি নোটিফিকেশন করতে হয়। কিন্তু আমরা এতে অনেক পিছিয়ে আছি। ইচ্ছে থাকলেও বাস্তবায়ন করা কঠিন। তবে নোটিফিকেশন করলে সক্ষমতা বাড়ে। গতকাল বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক বিষয়ক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘৮ ও ৯ এপ্রিল সরকারি অফিস খোলা থাকবে। তবে ঈদে ঐচ্ছিক ছুটির একটা ব্যবস্থা আছে, নিয়ম অনুযায়ী কেউ চাইলে সেই ছুটি নিতে পারবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ক্যালেন্ডারে যেভাবে ছুটি করা আছে, ওভাবেই ছুটিটা থাকবে। ৮ ও ৯ তারিখে অফিস খোলা থাকবে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৯ এপ্রিল কেউ ছুটি চাইলে দেওয়া হবে কি না-জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের ঐচ্ছিক ছুটির একটা ব্যবস্থা আছে। যারা ঐচ্ছিক ছুটি নিতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করবেন তারা তো তা নিতেই পারবেন। এর জন্য আলাদা নির্দেশ দেওয়ার দরকার নেই। এটা আমাদের ছুটি বিধিতেই আছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪’, ‘বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (স্থাবর সম্পত্তি অর্জন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২৪’ ও ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ আইনগুলো গত সরকারের মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলেও তা সংসদে বিল আকারে পাস হয়নি। তাই নতুন সরকার গঠন হওয়ায় নতুন করে আইনগুলো মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য এসেছে বলে জানানো হয়। বৈঠকে ‘আমদানি ও রপ্তানি আইন, ২০২৪’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও নিষিদ্ধকরণের ১৯৫০ সালের আইন আছে। পুরনো আইনগুলো পর্যায়ক্রমে যুগোপযোগী করার নির্দেশনা আছে। এজন্য নতুন আইনের খসড়া করা হয়েছে। আগের আইনে নতুন করে কিছু বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। আগে শুধু পণ্যের কথা বলা ছিল। এখন বাণিজ্যিকভাবে সেবা কার্যক্রমও এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সভায় ‘বিধবা ও স্বামীনিগৃহীতা ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সরকারের একটি খুব বড় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হলো বিধবা ও স্বামীনিগৃহীতা ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন। এটি প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৮-৯৯ সালে শুরু করেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার বিধবা ও স্বামীপরিত্যক্তাকে ভাতা দেওয়া হয়েছে। তাদের মাসিক ৫৫০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। আগের নীতিমালায় কারা ভাতা পাবেন সে যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা ছিল : তার ব্যক্তিগত বার্ষিক আয় ১২ হাজার টাকার নিচে হতে হবে। এখন এটা বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ বছরে যাদের ১৫ হাজার টাকার কম আয় তারা ভাতার আওতায় আসবেন। এখন ভাতাগ্রহীতা প্রতিজনকে মাসে ৫৫০ টাকা করে দেওয়া হয়। মোট ২৫ লাখ ৭৫ হাজার জনকে এ ভাতা দেওয়া হয়। নতুন নীতিমালায় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জিটুপি (সরকার থেকে ব্যক্তি) ভিত্তিতে এ ভাতা পরিশোধ করা হবে। কেউ ভাতা পেতে চাইলে তাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে বাছাইপ্রক্রিয়া চলবে। ওখানে একটা যাচাইবাছাই সিস্টেম থাকবে। সেখানে যারা নির্বাচিত হবেন তারাই ভাতা পাবেন। বদলি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বদলির আদেশ হলে সেটি যেন বাস্তবায়ন হয় সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। যদি কোনো বিশেষ যুক্তি থাকে, কোনো পরিস্থিতি থাকে তা বিবেচনা পরবর্তী সময়ে করা হবে। তিনি বলেন, বদলি আমাদের প্রশাসনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বদলি করে বদলি হওয়া স্থানে তাকে যেতে হবে, এটাই নিয়ম। এটা সর্বাত্মকভাবে অনুসরণ করব, এটাই প্রত্যাশা এবং এটি আমরা সব সময় এস্টাবলিস্ট করে থাকি। কখনো কখনো ব্যতিক্রম কিছু ঘটনা ঘটে।

 

সর্বশেষ খবর