নির্বাচন কমিশন ঘোষিত প্রথম দুই ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শুরু না হলেও এ নির্বাচন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ে বিভেদ প্রকাশ্যে আসছে। পুরোদমে নির্বাচন শুরু হলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়ার আশঙ্কা করছেন দলটির নেতারা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের ‘অযাচিত’ হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম। তারা বলছেন, উপজেলা নির্বাচনে যে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন। এ ব্যাপারে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।
জানা গেছে, আসন্ন উপজেলা ভোটে নৌকা প্রতীক না দেওয়ায় উপজেলায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করার সব প্রস্তুতি শুরু করেছেন কিছু এমপি-মন্ত্রী। ছেলে, বউ, মেয়ে, ভাই, শ্যালক, ভগ্নিপতি, ভাগনে, বেয়াইদের উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করছেন তারা। কেন্দ্রের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কাউকে প্রার্থী করা যাবে না। কিন্তু এমপিরা কেন্দ্রের নির্দেশনা মানছেন না। তারা প্রার্থিতা ঘোষণা করছেন আত্মীয়স্বজনসহ নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে। ফলে মাঠপর্যায়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে। উপজেলায় এমপিরা যেন হস্তক্ষেপ করতে না পারেন সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দলের হাইকমান্ডের কঠোর মনোভাব ইতোমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও কিছু জায়গায় এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ বন্ধ হয়নি। যতই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে, এমপি-মন্ত্রীদের ‘অযাচিত’ হস্তক্ষেপের স্বরূপ ততই বেরিয়ে আসছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা চান, উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক। প্রার্থী বেশি থাকলে ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়বে- এমন প্রত্যাশা দলীয় সভানেত্রীর। সে কারণে এবার দলীয় প্রতীক কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। সেই সুযোগ নিতে চাচ্ছেন কিছু এমপি-মন্ত্রী। নির্বাচনি এলাকায় ভিন্নমতের বা নিজ দলের লোকই হোক, কিন্তু এমপিদের সঙ্গে বিরোধ আছে এমন কাউকে চাইছেন না জনপ্রতিনিধি বানাতে। সে কারণে পছন্দের লোকদের প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে রাখছেন। যা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে ঢালাওভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হবে না-দলের সভানেত্রী সবাইকে আগেই বলে দিয়েছেন। নেত্রী চান বেশি প্রার্থী ভোটে অংশ নিক। এতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।
ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন
প্রেসিডিয়াম সদস্য, আওয়ামী লীগ
এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ বন্ধে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সর্বশেষ ২ মার্চ এক বিবৃতি দিয়েছেন। ওই বিবৃতিতে তিনি যারাই উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ ছাড়া ৩০ মার্চ রংপুর বিভাগ, ৩১ মার্চ চট্টগ্রাম বিভাগ ও ৪ এপ্রিল খুলনা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হবে না-দলীয় সভানেত্রী সবাইকে আগেই বলে দিয়েছেন। নেত্রী চান বেশি প্রার্থী ভোটে অংশ নিক। এতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। কিন্তু আমরা ইদানীং লক্ষ্য করছি কিছু এমপি দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করছেন। তারা এটা করতে পারেন না। দলের নির্দেশনা অমান্য করলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নিয়ে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আলোচনা করা হবে।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত কাউকে মনোনয়ন বা প্রতীক না দেওয়া। সেক্ষেত্রে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার স্বার্থে এমপিরা যেন কাউকে মনোনয়ন না দেন আমরা সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখব। কারণ দলের চেইন অব কমান্ড আগে ঠিক রাখতে হবে।’
আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের দলীয় সভানেত্রী চান প্রভাবমুক্ত ও উৎসবমুখর নির্বাচন। কিন্তু এ নির্বাচন প্রভাবিত করতে কারোর হস্তক্ষেপই মেনে নেওয়া হবে না। মাইম্যান জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার করবেন- এটা মেনে নেওয়া হবে না।’ প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপ ৮ মে এবং দ্বিতীয় ধাপ ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে।