সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুই বছরের ব্যবধানে অর্থনীতি ঝুঁকিপূর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই বছরের ব্যবধানে অর্থনীতি ঝুঁকিপূর্ণ

ড. মুস্তাফিজুর রহমান

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)        সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, একটা ভালো অর্থনীতি মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে। খোদ সরকারি হিসাব বলছে, দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকা মানুষও এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বৈষম্য চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দেশে এখন দুই ধরনের অর্থনীতি চলছে। গতকাল ইআরএফ আয়োজিত ‘ম্যাক্রো ইকোনমি স্ট্যাবিলিটি অ্যান্ড নেক্সট বাজেট’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্যানেল বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।  সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। আরও অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ, ঢাকা চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট শামস মাহমুদ, সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ। এতে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাস্তবতার নিরিখে বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রায় ১৮ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরের কাছাকাছি। যা কভিডের পরই অনেক কম এবং সহনীয় ছিল। উচ্চ প্রবৃদ্ধি আর নিম্ন মূল্যস্ফীতির ঠিক বিপরীত অবস্থায় চলে গেছে দেশের অর্থনীতি। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে এটা সহজেই এড়ানো যেত। ব্যাংক ঋণ আর আমানতের সুদের হার জোর করে ধরে রেখে এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করায় এখন তার খেসারত দিতে হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন জ্বালানির দাম বিশ্বব্যাপী বেড়ে যাচ্ছিল। ডলারের বাজারে এক ধরনের সংকট তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু তখন আমরা এটাকে পাত্তা দিলাম না। এক্সচেঞ্জ রেট জোরপূর্বক ধরে রাখা হলো। এটা বোঝার জন্য তো রকেট সায়েন্সের প্রয়োজন ছিল না। অর্থনীতি তো একটা বিজ্ঞান। আমরা যে মুদ্রানীতি দিয়েছিলাম সেটা বাস্তবায়ন করতে পারিনি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে।

ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনটাকে নষ্ট করে ফেলেছি। যেটার কারণে আমরা আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর রাখিনি। সেগুলোকে স্বাধীনভাবে কোনো কাজ করতে দিইনি। বাংলাদেশ ব্যাংকও তখন অসহায় ছিল। চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর লাইসেন্স দেওয়ার সময় তৎকালীন গভর্নর বলেছিলেন, আমাদের এত ব্যাংকের প্রয়োজন নেই, তারপরও দিচ্ছি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলেছিলেন- এত ব্যাংকের দরকার নেই, তাও আমরা রাজনৈতিক কারণে দিচ্ছি। যার ফলাফল আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। আমাদের ডাইরেক্ট ট্যাক্স বাড়াতে হবে। একজন লোক সারা বছর বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করেন, যত রকমের বিলাসিতা আছে করেন, অথচ কর দেওয়ার সময় এমন অবস্থা দাঁড়ায় যেন তাকেই সহায়তা করা প্রয়োজন। ফলে বৈষম্য তো বাড়বেই। কম  বৈষম্য দিয়ে শুরু করতে পারলে উন্নয়নটা ভালো হয়। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি। বঙ্গবন্ধু এমন দেশ চাননি। তিনি তো শোসন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। ৩০ লাখ মানুষ আত্মত্যাগ করেছিলেন। অথচ আমাদের এই বৈষম্যটা কমল না। এখন আরও চরম পর্যায়ে চলে গেল। যেখানে অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ কর দেওয়ার কথা। সেখানে দিচ্ছে মাত্র ৯ শতাংশ। এটা কেন বাড়ছে না। সরকার এখানে ক্ষমতা দেখাতে পারছে না কেন। সরকার অনেক শক্তিশালী। বিভিন্ন সময় তো সরকার তার শক্তিমত্তা দেখায়। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সেই শক্তিমত্তা দেখাতে পারে না কেন? ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকট, শিল্প উৎপাদনের উচ্চ ব্যয়, ডলার সংকট, ব্যাংক ঋণের সুদ বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এসব সমস্যার সমাধান করতে না পারলে এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর সংকট আরও বাড়বে বলে মনে করেন অন্য বক্তারা।

সর্বশেষ খবর