মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

মাটির টানে ঘরে ফেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাটির টানে ঘরে ফেরা

কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল ট্রেনে ওঠার লড়াই ছবি : জয়ীতা রায়

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কয়েকদিন ধরে মানুষ মাটির টানে ঘরে ফিরছেন। যাত্রাপথে কার্যত মানুষের ঢল নেমেছে। পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানেই মানুষ বাড়ি ছুটছেন। এ অবস্থায় যানজটের নগরী ঢাকা গতকাল ছিল অনেকটাই ফাঁকা।

বাড়িফেরা উপলক্ষে রাস্তায় পরিবহনের চাপ বাড়ায় যান চলাচলেও কিছুটা ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে গতকাল। মহাসড়কগুলোতেও ছিল গাড়ির চাপ। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী বাস কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীরা অপেক্ষা করছেন বাসের জন্য। কয়েকদিন সাচ্ছন্দ্যে মানুষ বাড়ি ফিরলেও গতকাল অনেক বাস দেরিতে ছেড়ে গেছে। ঈদযাত্রায় ট্রেনের শিডিউলে গতকালও বড় কোনো বিপর্যয়ের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ট্রেনে বাড়তি যাত্রীর চাপ লক্ষ্য করা গেছে। টিকিট ছাড়া উল্লেখ্যসংখ্যক যাত্রী উঠে পড়ায় এই চাপের সৃষ্টি হয়। টিকিটবিহীন যাত্রী ঠেকাতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কর্তৃপক্ষের নানা আয়োজন থাকলেও গতকাল এসব উদ্যোগ অনেকটাই ব্যর্থ হয়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যাত্রী চাপ অনেক বেড়েছে। তবে রেলের শিডিউল বিপর্যয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঈদযাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যের করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের ব্যাপক চাপে সাভার মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। যানবাহনের চাপ ছিল সাভার থেকে নবীনগর, নবীনগর থেকে আরিচা, নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়কেও। বাইপাইলে সম্ভার পাম্প থেকে কবিরপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার সড়কে যানবাহনের ধীরগতি ছিল। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কেও গতকাল যানবাহনের চাপ ছিল। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ যানবাহন চলাচল করেছে। অবশ্য সন্ধ্যা পর্যন্ত বড় যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। তবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানবাহনের চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। গতকাল দুপুরে ছুটি পেয়ে শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর থেকে লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক ঈদযাত্রায় শামিল হন। এতে গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীর ঢল নামে। এতে পরিবহন সংকটে পড়েন তারা। পরিবহন সংকটে পড়ে বাস, ট্রাক, পিকআপ, ট্রাকে তারা গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুরের পর থেকে গাজীপুরের ঢাকা ময়মনসিংহ ও ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের ভিড় শুরু হয়। কারখানার শ্রমিকরা ছুটি পেয়ে বাড়ির উদ্দেশ রওনা দিয়েছেন। ফলে বেড়েছে যাত্রীদের ভিড়, দেখা দিয়েছে যানবাহনের চাপ। বিকালে এই চাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ওসি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, কারখানা ছুটি হওয়ায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে। ফলে চন্দ্রায় যানবাহনে ধীরগতি আছে। যাত্রাপথ স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া এলাকায় দুটি উড়াল সড়কসহ টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সাতটি ফ্লাইওভার চালু হয়েছে। অন্যবারের চেয়ে এবার ঈদযাত্রা সাচ্ছন্দ্যের হবে বলে আশা করছি।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রি-মোড় এলাকায় দুপুরের পর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট শুরু হয়। কালিয়াকৈর উপজেলার আশপাশে কারখানাগুলো ছুটি হওয়ায় এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রীরা অনেকে গাড়ি না পেয়ে হেঁটে স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে রওনা করে। মহাসড়কের বিভিন্ন গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। শফিকুল ইসলাম নামে এক যাত্রী জানান, সিরাজগঞ্জ যাব কিন্তু গাড়িতে ভাড়া চাচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। কীভাবে বাড়ি পৌঁছাবে বুঝতে পারছি না। কুলসুম বেগম নামে একজন জানান, ২ ঘণ্টা দরে বসে আছি, কোনো গাড়িতেই উঠতে পারছি না। বাড়ি যেতে পারব কি না তা এখনো বলতে পারছি না।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর