মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ তিনটি চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে মোকাবিলা করছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ তিনটি চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে মোকাবিলা করছে

ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জার্সি উপহার দেন -পিআইডি

ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে একটি বৈশ্বিক জোট গঠনের লক্ষ্যে লড়াই করছে ব্রাজিল। ব্রাজিলের সভাপতিত্বে আসন্ন জি টুয়েন্টি সম্মেলনের অগ্রাধিকার ইস্যুগুলোর মধ্যেও এ তিনটি বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশ এ তিনটি চ্যালেঞ্জ খুব ভালোভাবে মোকাবিলা করছে।

গতকাল বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। দুই দিনের ব্যস্ত সফরসূচি শেষে গতকাল রাতে ঢাকা ত্যাগ করেছেন ব্রাজিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল। গতকাল সফরের শেষ দিনে দুপুরে গাজীপুরের দুটি ওষুধ কারখানা পরিদর্শন শেষে বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমি এবং সন্ধ্যায় এফবিসিসিআইর সেমিনারে যোগ দেন ব্রাজিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর রাত ১১টায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানযোগে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মাউরো ভিয়েরা। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাজিলকে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক (আরএমজি) পণ্য আমদানির আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর বিশাল সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আরএমজি পণ্য তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে ব্রাজিলে রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশটি সরাসরি বাংলাদেশ থেকে আরএমজি পণ্য আমদানি করলে ব্রাজিলের জন্য এটি আরও সাশ্রয়ী হবে।

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য ব্রাজিলের দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে মূলত চিনি, সয়াবিন তেল ও তুলা আমদানি করে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য নিশ্চিত করতে ব্রাজিল বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়াজাত পণ্যসহ আরও পণ্য আমদানি করতে পারে। তিনি বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিও ডি জেনিরোতে ২৪ জুলাই অনুষ্ঠেয় ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে একটি বৈশ্বিক জোট গঠনে জি-২০ টাস্ক ফোর্সের চূড়ান্ত বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য তার দেশের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার একটি আমন্ত্রণপত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেন। মাউরো ভিয়েরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেরও ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ব্রাজিল উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায়। ব্রাজিল ও বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমপরিমাণ এবং উভয় দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে।

মাউরো ভিয়েরা গাজা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, তার দেশও গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ব্রাজিল একই মত পোষণ করে।

শেখ হাসিনা গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেন। কারণ, ইরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় এমনকি হাসপাতাল ও আশ্রয় কেন্দ্রে হামলায় নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ নিহত হয়েছে। নারী, শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাও হামলা থেকে রেহাই পাননি। প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন যে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ হিসেবে ব্রাজিল প্রথম ১৯৭৩ সালের ১৫ মে বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে ব্রাজিলের সহায়তা কামনা করেন। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম সংবলিত ব্রাজিলের জাতীয় ফুটবল দলের জার্সিও প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন।

ওষুধ, স্বাস্থ্যসেবা, পাট, তৈরি পোশাক, খাদ্য ও কৃষিপণ্যে অপার বাণিজ্য সম্ভাবনা দেখছে ব্রাজিল : বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের বাণিজ্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হতে পারে উভয় দেশ। এক্ষেত্রে এফটিএ, পিটিএ এর মতো বিশেষ বাণিজ্য চুক্তি সই এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করবে। দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনার এবং বিটুবি ম্যাচ মেকিং অনুষ্ঠানে উঠে আসে এসব কথা। বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি, সম্ভাব্য খাতসমূহ চিহ্নিতকরণ, বাণিজ্য বাধা দূরীকরণ, মসৃণ বাণিজ্য লেনদেনের সহজতর উপায় অন্বেষণ, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশে এ সেমিনার ও বিটুবি মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা বলেন, বিগত দশকে বাংলাদেশে লজিস্টিকস, পরিবহন ও যোগাযোগ এবং অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প সম্প্রসারণের সুযোগকে উন্মোচিত করেছে। ব্রাজিল ও বাংলাদেশের পরস্পরের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চাই।

সর্বশেষ খবর