মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

শাওয়াল মাস ও ছয় রোজার ফজিলত

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

শাওয়াল মাস ও ছয় রোজার ফজিলত

দেখতে দেখতে মাহে রমজান শেষ হয়ে যাচ্ছে। রমজান মাস আসার কারণে যেই ইবাদত-বন্দেগি ও আমল করা হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার দ্বারাই মাহে রমজানের সার্থকতা প্রমাণিত হয়। রোজা আমাদেরকে তাকওয়া, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও পরোপকার শিক্ষা দেয়। যে শিক্ষা একজন মানুষকে খাঁটি মুমিন বানাতে প্রধানতম ভূমিকা রাখে। ইসলামে ইবাদতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। ইমানের পরই ইবাদতের স্থান। দুনিয়াতে আসার মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাত লাভ করা। যেমনটি আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে।’ (সুরা যারিআত : ৫৬) ইবাদতের বিকল্প অন্য কিছু নেই। বস্তুর মোহে আক্রান্ত মানবজাতিকে আল্লাহর হক সম্পর্কে এবং সেই হক আদায়ের সঠিক পথ ও পন্থা সম্পর্কে একমাত্র ইসলামই সচেতন ও দিকনির্দেশনা দান করে; যা পূরণ করার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হয় এবং খাঁটি মুমিন হতে পারে। সহিহ বুখারিসহ হাদিসের কিতাবগুলোতে সেই বিখ্যাত হাদিসে ইসলামের পাঁচটি খুঁটির কথা বলা হয়েছে। তন্মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে ইমান। বাকি চারটি হচ্ছে, চার ফরজ ইবাদত তথা- সালাত, জাকাত, সাওম ও হজ। কাজেই ইবাদত-বন্দেগির বিষয়ে যত্নবান হওয়া চাই। রমজান-পরবর্তী শাওয়াল মাস। এই ফজিলতপূর্ণ মাসের প্রথম তারিখ হচ্ছে, ইদুল ফিতর। পুরো একটি মাস রোজা রাখার পর আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে একটি খুশির দিন দান করেছেন। তাঁরা এই দিনটিতে ইসলামের সীমারেখার ভিতরে থেকে আনন্দ উৎসব উদযাপন করে থাকে। শাওয়াল মাস থেকেই ইসলামের মূল খুঁটির এশটি- হজের প্রস্তুতি শুরু হয়। এ ছাড়াও এই মাসে মুমিন বান্দাদের জন্য বড় একটি পুরস্কার রয়েছে। তা হলো শাওয়ালের ছয় রোজা। রমজানের রোজার শিক্ষা যেন শুধু রমজান মাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে পুরো বছর নিজ জীবনে এর অনুশীলন হতে থাকে, সে জন্যই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বছরের ১২ মাসের বিভিন্ন সময়ে নফল রোজা নিজে রেখেছেন এবং উম্মতকে রাখতে উৎসাহিত করেছেন। এমনকি প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন তিনি নফল রোজা রাখতেন। নফল রোজার মধ্যে উত্তম নফল রোজা হচ্ছে শাওয়ালের ছয় রোজা। এর ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানের রোজা রাখল, এরপর শাওয়ালে ছয়টি রোজা রাখল, এটি তার জন্য সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য হবে।’ (সহিহ মুসলিম : ১১৬৪) সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার আল্লামা নববী (রহ.) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ইসলামী মনীষীদের মতে, উত্তম হচ্ছে ঈদুল ফিতরের পরের ছয় দিন পরপর রোজাগুলো রাখা। তবে যদি বিরতি দিয়ে দিয়ে রাখে বা মাসের শেষে রাখে তাহলেও ‘রমজানের পরে’ রোজা রাখার ফজিলত পাওয়া যাবে। (শরহু সহিহ মুসলিম, নববী) আলোচ্য হাদিসে লক্ষণীয় বিষয় হলো- শুধু রমজান মাস রোজা রাখলে এই সওয়াবের অধিকারী হবে অথবা শুধু শাওয়ালের ছয় রোজা রাখলে এক বছরের নফল রোজার সওয়াব পাওয়া যাবে এমনটি নয়। বরং রমজানের সম্পূর্ণ রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা। তাহলেই সেই সওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে। রমজান মাস ও শাওয়ালের ছয় রোজা রাখলে কীভাবে পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়, এর বিবরণ পাওয়া যায় অন্য হাদিসে। হজরত ছাওবান (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজান মাসে রোজা রাখা ১০ মাস রোজা রাখার সমান এবং শাওয়ালে ছয় দিন রোজা রাখা দুই মাস রোজা রাখার সমান। সুতরাং রমজান ও ছয় রোজা মিলে এক বছরের রোজার সমান।’ (মুসনাদে আহমদ : ২২৪১২) এই হাদিসের বর্ণনার সঙ্গে মিল রেখে অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহতায়ালা এক নেকিকে ১০ নেকির সমান করেছেন। সুতরাং (রমজানের) এক মাস (রোজা রাখা) ১০ মাসের সমান। তার সঙ্গে ইদুল ফিতরের দিন বাদ দিয়ে পরে ছয় দিন রোজা রাখা সারা বছর রোজা রাখার সমান।’ (সুনানে নাসাঈ : ২৮৭৪) হাদিসগুলোতে ওই আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো পুণ্য নিয়ে আসবে, তার জন্য অনুরূপ ১০টি পুণ্যের সওয়াব রয়েছে।’ (সুরা আনআম : ১৬০) এই ছয় রোজা কেউ চাইলে একসঙ্গে লাগাতার রাখতে পারে। অথবা একদিন পরপরও রাখা যায়। মোটকথা যার যেমন সুবিধা হবে, তিনি সেভাবেই রাখতে পারবেন। শুধু ঈদের দিন ছাড়া। ওইদিন রোজা রাখা সম্পূর্ণ হারাম। তবে শাওয়ালের ছয় রোজা শাওয়াল মাসের মধ্যেই রাখতে হবে। তাহলে ছয় রোজার পূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বান্দা যখন কোনো নেক আমল করে, তখন তার জন্য আরও অনেক নেক আমল করা সহজ হয়ে যায়। সুতরাং একটি ভালো কাজ আরেকটি ভালো কাজের দিকে নিয়ে যায়, যদি তা শুধু আল্লাহর জন্য করা হয়। আল্লাহপাক আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ খবর