শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রকল্পের টাকা দ্রুত ছাড়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের টাকা হাতে ধরে না রেখে দ্রুত ছাড়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তাঁর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশ দেন। বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, অর্থ সচিবকে এ নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রকল্প শেষ হলে এর থেকে রিটার্ন আসা শুরু হবে। এতে একদিকে বাড়বে এডিপি বাস্তবায়নের হার। যেসব প্রকল্প ৬০-৭০ শতাংশ বা আরও বেশি বস্তবায়িত হয়েছে সেগুলোর বস্তবায়ন সম্পন্ন হলে সেসব প্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে। তাই প্রকল্পের টাকা ছাড় করতে নির্দেশ দেন তিনি। এ ছাড়া সভায় ‘কিশোর গ্যাং’ মোকাবিলার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বিকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানোর সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, কিশোর গ্যাং ক্ষেত্রে অপরাধী মোকাবিলার প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ না করে কিশোর অপরাধীদের ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কাজে অভিভাবক, শিক্ষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে যুক্ত হতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধীদের যখন মোকাবিলা করা হয়, সে ক্ষেত্রে যেন মনে রাখা হয় তারা ভবিষ্যতের নাগরিক। প্রথাগত অন্য অপরাধীদের সঙ্গে যেন মিলিয়ে ফেলা না হয়। তাদের জন্য বিশেষ কাউন্সেলিং ব্যবস্থা, কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা, এ ধরনের সুযোগসুবিধাগুলোও যেন রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এদের (কিশোর অপরাধী) ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। তাদের যেন দীর্ঘমেয়াদে অপরাধী বানিয়ে ফেলা না হয়, সংশোধনের সুযোগ যেন থাকে। কারাগারে যেন অন্য আসামিদের সঙ্গে না রাখা হয়, সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন। আর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প নিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তারা এ ব্যাপারে কাজ শুরু করবে।

বর্তমানে তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (গাজীপুর, টঙ্গী ও যশোর) থাকার কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ সংখ্যা বাড়াতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া আরও সুযোগসুবিধা বাড়াতে বলেছেন, যাতে কিশোর অপরাধীরা সংশোধিত হতে পারে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহবুব হোসেন বলেন, আইন তার স্বাভাবিক গতিতে চলবে। কিন্তু এদের (কিশোর অপরাধী) যখন মোকাবিলা করা হবে, তখন যেন মনে রাখা হয়, তাকে যেন আরও অপরাধী না বানিয়ে ফেলা হয়। সংশোধন করার একটি পরিবেশ যেন থাকে। ব্যয় কমিয়ে আমদানি-রপ্তানি এবং স্থানীয় পণ্যের সহজ ও অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে মন্ত্রিসভা ‘জাতীয় লজিস্টিক নীতি, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে এর আগে বাংলাদেশে কোনো নীতিমালা হয়নি। অনেকদিন থেকে এটা নিয়ে দাবি ছিল। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে লজিস্টিক সাপোর্টের গুরুত্ব অপরিসীম। মোট ব্যয়ের একটা বড় অংশ এখানে আছে। নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্ধারিত সময় বা স্বল্পতম সময়ে স্বল্পতম ব্যয়ে সহজভাবে যাতে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাটা নিশ্চিত হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কার্যক্রম গ্রহণ করবেন এবং কী কার্যক্রম গ্রহণ করলে এ সার্ভিসটা দেওয়া সম্ভব হবে, সে-সংক্রান্ত একটি দিকনির্দেশনা আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রপ্তানি পণ্য উৎপাদন স্থান থেকে ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত যাত্রাটি যাতে বাধাহীন হয়, সেজন্য কী সহায়তা করা যায় তার জন্য নীতিমালা করা হয়েছে। আগে এটি ছিল না, এটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে করা হলো। তিনি আরও বলেন, জিপিএস ট্র্যাকিং ও কানেকটিভিটি হাব অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় একটি কানেকটিভিটি হাব হবে, সেখানে পণ্য সরবরাহের জন্য ওয়্যারহাউস (গুদামঘর) ও পণ্য যাতে পচে না যায়, সে ব্যবস্থা করা হবে। নীতিমালায় রপ্তানিকে মুখ্য ধরা হয়েছে এবং স্থানীয় বাজারের কথাও বলা হচ্ছে। পণ্যের অবাধ যাতায়াতের জন্য যেসব অবকাঠামো করা দরকার সে বিষয়ে নীতিমালায় বলা আছে। এ-সংক্রান্ত সব নীতিমালা পরীক্ষা করে তা ব্যবসাবান্ধব করতে বলা হয়েছে। কোন সেবা ব্যক্তি খাতে আসবে, কোনটা পিপিপি হবে, কোনটায় সরকার বিনিয়োগ করবে সে তালিকাও রয়েছে।

মাহবুব হোসেন বলেন, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা পরিবেশবান্ধব করতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। পিপিপি, সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের কথা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ সরকারি ও পিপিপির মাধ্যমে হবে। বিমান ও অ্যাভিয়েশনও একইভাবে হবে। সমুদ্রসেবার ক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি ও পিপিপিও থাকবে। সুনির্দিষ্টভাবে বললে, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সেবায় সরকারি, বেসরকারি ও পিপিপি থাকবে। রাইড শেয়ারিং, ক্লিয়ারেন্স ও ফরোয়ার্ডিং সেবা পুরোপুরি বেসরকারিভাবে হবে। এভাবে ২১টি সেবার কথা বলা হয়েছে যে সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে। সচিব বলেন, লজিস্টিক চ্যানেলের ক্ষেত্রে কোথাও কোনো বাধার সৃষ্টি করা যাবে না। অর্থাৎ লজিস্টিক খরচ কমাতে হবে। এতে ১৯ শতাংশ খরচ কমে যাবে রপ্তানির ক্ষেত্রে। আর এটা করতে যা যা করা দরকার, সে সহায়তা দেওয়া হবে। খরচ কমিয়ে সময়মতো সেবা দেওয়ার জন্যই আইনটি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের একটি কাউন্সিল থাকবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব বলেন, নাটোর জেলায় স্থাপনের জন্য গত বছর অক্টোবরে এ আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেও সংসদে আইন আকারে পাস হয়নি। সে কারণে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় এর অনুমোদন নিতে হয়েছে।

সর্বশেষ খবর