মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

১৮ নারীসহ গ্রেফতার ৫৪

ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় ড্রাইভার আটক গাড়ি জব্দ, সন্ত্রাসী ধরতে সাঁজোয়া যান, অভিযানের প্রতিবাদে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

বান্দরবান প্রতিনিধি

বান্দরবানে তিন সরকারি ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্রলুট ও অপহরণের ঘটনায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর কম্বিং অপারেশনে গতকাল রুমা উপজেলার বেথেলপাড়া থেকে ৪৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ জন নারী। এ নিয়ে রবি ও সোমবার দুই দিনে গ্রেফতার হলেন ৫৪ জন। বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, এর অধিকাংশই কেএনএফের সক্রিয় সদস্য এবং তারা রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলায় অংশ নিয়েছেন। পুলিশ সুপার জানান, বেথেলপাড়ার অভিযানে ৪৯ জনকে আটকের পাশাপাশি সাতটি দেশি বন্দুক, ২০ রাউন্ড কার্তুজ, একটি ল্যাপটপ ও কেএনএফের ব্যবহৃত কয়েকটি ইউনিফর্ম উদ্ধার করা হয়। রবিবার থেকে সেনাবাহিনী এ অভিযানে অংশ নেয়। তাদের নেতৃত্বে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছেন। অভিযানে রবিবার থানচি থেকে একটি জিপ (ঢাকা মেট্রো-ন-১১-৩০০৭) ও মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন সাগর (২৮) নামে ওই গাড়ির চালককে আটক করা হয়। ওই গাড়িটি ৩ এপ্রিল থানচিতে ব্যাংকে সন্ত্রাসী হামলার সময় কেএনএফ সদস্যদের বহন করেছিল। পুলিশ জানায়, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ওই সন্ত্রাসকাণ্ডে অংশ নেওয়া কেএনএফের তিন সক্রিয় সদস্যকে বান্দরবান সদর উপজেলার রেইচা এলাকা থেকে আটক করা হয়। তারা হলেন থানচি উপজেলার সিম তলাং পি পাড়ার একই পরিবারের সদস্য জেমিনিও বম ও আমে লনচেও বম এবং রোয়াংছড়ি উপজেলার রনিনপাড়ার ভান নুন নুয়াম বম। এর আগে রবিবার ভোররাতে র‌্যাব বিশেষ অভিযান চালিয়ে বান্দরবান সদর উপজেলার শ্যারনপাড়া থেকে চেওসিম বম (৫৫) নামে কেএনএফের একজন শীর্ষ নেতাকে দুটি দেশি বন্দুকসহ গ্রেফতার করে। অভিযান আরও কার্যকর করতে আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার-এপিসি নামে সাঁজোয়া কর্মী বহনকারী চারটি গাড়ি সংযুক্ত করা হয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এ ধরনের এপিসি যান ব্যবহার করা হয়। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রায়হান কাজেমী জানান, অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য চারটি এপিসি গাড়ি ইতোমধ্যে বান্দরবান জেলা সদরে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে একটি করে গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরেকটি গাড়ি জেলা সদরে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান। সোনালী ব্যাংক আঞ্চলিক শাখার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) ওসমান গণি জানিয়েছেন, জেলা সদরে অবস্থিত প্রধান শাখা থেকে ওইসব এলাকার ব্যাংকিং কার্যক্রম ও লেনদেন পরিচালিত হচ্ছে। গতকাল সোনালী ব্যাংক বান্দরবান প্রধান শাখায় গিয়ে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য অপেক্ষা করছে। প্রচণ্ড ভিড় আছে এটিএম বুথগুলোতেও। প্রতিটি ব্যাংকের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও এপিবিএনের বিপুলসংখ্যক সদস্য সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে জেলা পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রবিবার রাতে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের রেইচা চেকপোস্ট এলাকা থেকে তিনজন ও গতকাল দুপুরে থানচির টিঅ্যান্ডটিপাড়া থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ভাননু নুয়াম বম, থানচি উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিংৎলাংপি পাড়ার জেমিনিউ বম ও আমে লনচেও বম। জিমিনিউ ও আমে লনচেও সম্পর্কে ভাই-বোন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গ্রেফতার অন্যজন থানচি সদর ইউনিয়নের টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা ইউসুফের ছেলে কফিল উদ্দিন থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত সাদা রঙের ভলভো গাড়ির চালক। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা : এদিকে প্রশাসনের কম্বিং অপারেশনের প্রতিবাদে বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় সব ধরনের যান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। সশস্ত্র সংগঠনটি সমাজমাধ্যমে এক বার্তায় এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কেএনএফের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং গতকাল সকালে এ বার্তা দেন। বার্তায় বলা হয় : সোমবার বিকাল ৫টা থেকে বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি এলাকায় সব ধরনের যান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সব গাড়ি সমিতির জন্য এ সতর্কবার্তা। জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী প্রতিটি যানবাহনের সমিতি ও মালিকরা তাদের এ নিষেধাজ্ঞা অমান্যের জন্য দায়ী থাকবে। এ প্রসঙ্গে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে উপজেলাগুলোয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে। প্রসঙ্গত, ২ এপ্রিল রাতে রুমার সোনালী ব্যাংকে শতাধিক কেএনএফ সদস্য অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালিয়ে পুলিশ, আনসার সদস্যদের জিম্মি করে ১৪টি অস্ত্র লুট ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে। এ ঘটনার ১৭ ঘণ্টার মধ্যে ৩ এপ্রিল থানচিতে গুলিবর্ষণ এবং কৃষি ও সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা লুট ও ৪ এপ্রিল ফের থানচির সোনালী ব্যাংক ও বাজারে আক্রমণ করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে কেএনএফ দমনে পাহাড়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে যৌথবাহিনী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর