শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

মধ্যপ্রাচ্যে ফের যুদ্ধের দামামা

ইসরায়েলে পাঁচ ঘণ্টা ধরে ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্রে ইরানের নজিরবিহীন হামলা

প্রতিদিন ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্যে ফের যুদ্ধের দামামা

ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের -সিএনএন

নানা জল্পনাকল্পনা এবং হুঁশিয়ারির পর বিশ্বকে চমকে দিয়ে মার্কিন মিত্র ইসরায়েলের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। সম্প্রতি সিরিয়ার রাজধানীতে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জবাব হিসেবে রবিবার গভীর রাতে সরাসরি ইসরায়েলের ওপর এ হামলা শুরু করে তেহরান। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চালানো হামলায় শত শত ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ব্যবহার করা হয়। প্রাথমিক খবর অনুযায়ী, হামলায় ইসরায়েলের একটি গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং একটি বিমানঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। অবশ্য ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানি হামলার জবাবে ইসরায়েল যদি পাল্টা হামলা চালায় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে। পাল্টা হামলার পরিকল্পনা থাকলেও এ মুহূর্তে স্পষ্ট করে তেলআবিব কিছু বলছে না। তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও ‘যুদ্ধ চায় না’ বলে দাবি করছে।

রবিবার রাতের হামলার একটি বিবরণ দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে দেশটি তিন শর বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এ হামলায় ইসরায়েলের একটি গোয়েন্দা কেন্দ্র ও একটি বিমানঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। হামলার পর ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি রাষ্ট্রায়ত্ত একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া ভাষণে এ তথ্য জানান। এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, রবিবার রাতে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। হামলার পরপরই তেলআবিব, পশ্চিম জেরুজালেমসহ ইসরায়েলি শহরগুলোয় ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসরায়েলের ৭২০টির বেশি জায়গায় বিমান হামলার সাইরেন বেজেছে। ইসরায়েলি সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম করপোরেশন জানিয়েছে, হামলায় ইরান ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র, ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ১৬০টি সুইসাইড ড্রোন ব্যবহার করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, ইরানের ছোড়া অধিকাংশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশসীমার বাইরেই ভূপাতিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ক্রুজ মিসাইলসহ বেশ কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। দুই শর বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত করেছে এবং একটি সামরিক ঘাঁটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। দুই মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনের কাছে জানিয়েছেন, রবিবার রাতের হামলা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য এক অজানা সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, রাতের এ হামলাকে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’ নাম দিয়েছে ইরান। এ হামলাকে ‘সীমিত ও নির্ধারিত’ বলে জানিয়েছেন ইরানি কর্মকর্তারা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান কী করতে সক্ষম তার সামান্য চিত্র দেখাল মাত্র। এটা এমন একটি দৃশ্য যা কখনো কেউ দেখেনি। মূলত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে দেশটির কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই রবিবার রাতে ইসরায়েলজুড়ে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। এমন হামলার পরই পাল্টা হামলার আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী, একই সঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিও সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছে দেশটি। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া বিবৃতিতে আইআরজিসির এক কমান্ডার জানান, ইসরায়েল যদি প্রতিক্রিয়া দেখায় তাহলে তার চেয়েও কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাবে ইরান। এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সতর্কতা জারি করে বলেছে, অধিকৃত গোলান মালভূমি, নেভাটিম, ডিমোনা এবং ইলাতের বাসিন্দাদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ‘প্রতিরক্ষামূলক স্থানের কাছাকাছি’ অবস্থান করতে হবে। খবরে বলা হয়, নেভাটিম এমন একটি স্থান যেখানে ইসরায়েলি বিমানঘাঁটির অবস্থান। দিমোনার উপকণ্ঠে ইসরায়েলের একটি পারমাণবিক চুল্লি রয়েছে। ইলাত হলো ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় লোহিত সাগর তীরবর্তী বন্দরনগরী। গাজায় চলমান যুদ্ধের সময় ইয়েমেনের হুতিদের বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছে এ শহরটি। ইরানের হামলা সম্পর্কে গতকাল নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ওপর ইরানের নজিরবিহীন হামলা তার শত্রু তেহরান সম্পর্কে ইহুদিবাদী দেশটির বিশ্বাস নাড়িয়ে দিয়েছে। এ হামলা তেলআবিবের দীর্ঘকালের হিসাবনিকাশ ভুল প্রমাণ করেছে-বৃহত্তর ইসরায়েলি আগ্রাসনের মাধ্যমে ইরানকে সর্বোত্তমভাবে নিবৃত্ত করা সম্ভব। বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে এবং ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় যুক্তি দিয়ে আসছেন, ইরানকে যত বেশি আঘাত করা হবে ততই তার যুদ্ধের ক্ষমতা খর্ব হবে। তবে রবিবার একযোগে ইরানের তিন শর বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত ছিল ইসরায়েলের ওপর ইরানের প্রথম সরাসরি আক্রমণ। এ হামলা ইসরায়েলি যুক্তি উল্টে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে বোঝা যাচ্ছে ইরানের নেতারা আর তাদের বিভিন্ন প্রক্সি বা ছায়াশক্তি যেমন লেবাননের হিজবুল্লাহ বা ইয়েমেনের হুতিদের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করে সন্তুষ্ট থাকছেন না। বরং ইরান এখন সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত। এ প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রাক্তন গবেষণাপ্রধান সিমা শাইন বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘আমি মনে করি আমরা ভুল হিসাবনিকাশ করেছি।’ তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েলের এতদিনের অভিজ্ঞতা হলো, ইরানের প্রতিশোধ নেওয়ার শক্তি নেই। ইসরায়েলি নেতাদের দৃঢ়বিশ্বাস ছিল ইরান যুদ্ধে জড়িত হতে চায় না। কিন্তু ইরান এখন একটি সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’

মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে ব্রিটেন : ইসরায়েলে ইরানের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত বেশ কিছু যুদ্ধবিমান এবং রিফুয়েলিং ট্যাংক পাঠিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ আকাশপথবিষয়ক এসব সম্পদ সিরিয়া ও ইরাকে সশস্ত্র আইসিস গ্রুপের বিরুদ্ধে বিদ্যমান অপারেশন জোরদার করবে। একই সঙ্গে যদি ‘আমাদের বিদ্যমান রেঞ্জের মধ্যে কোনোরকম আকাশপথে হামলা আসে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে।’ একজন মুখপাত্র বলেছেন, বেশ কিছু যুদ্ধবিমান অস্থায়ী ভিত্তিতে রোমানিয়া থেকে পাঠানো হয়েছে।

ইরানের ঘোষণা : ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের সামরিক অভিযান আপাতত সমাপ্ত হয়েছে। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করলে আরও বড় আক্রমণ চালাবে তেহরান। আর এ লড়াই কেবলই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার। যুক্তরাষ্ট্রকে এর বাইরে থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান সরকার। এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন।

ক্ষয়ক্ষতির ছবি প্রকাশ করল ইসরায়েল : বিবিসির খবর অনুযায়ী, ইরানি হামলায় ক্ষয়ক্ষতির ছবি প্রকাশ করেছে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। দুটি ছবিতে দেখা যায়, ক্ষেপণাস্ত্রর আঘাতে একটি রাস্তায় এবং এয়ারবেজের কাছে একটি ফাঁকা জায়গায় গর্ত তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার বৈঠক : ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাল্টা হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসেছিল ইসরায়েল। তবে বৈঠকটি কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে।

ইসরায়েলকে সহায়তার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র : ইরানের বিরুদ্ধে কোনো পাল্টা আক্রমণাত্মক পদক্ষেপে সাহায্য করবে না বলে জোর দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও ইসরায়েলের জন্য স্থগিত করে রাখা একটি সহায়তা তহবিল নিয়ে আবারও ভাবতে শুরু করেছে বাইডেন প্রশাসন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রবিবার গভীর রাতে কথা বলেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে। সে সময় বাইডেন বলেছেন, ইরানের বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় কোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে অংশ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও সংঘাত কমাতে বিশ্বনেতাদের আহ্বানে বাইডেনও সুর মিলিয়েছেন। তবে ইসরায়েলের জন্য স্থগিত সহায়তা তহবিলটি যদি পাস করিয়েই ফেলে বাইডেন প্রশাসন, তবে সহিংসতা কমার আশা শিগগিরই আলোর মুখ দেখবে না। কারণ, সে ক্ষেত্রে নেতানিয়াহুকে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার সহায়তা পেতে সাহায্য করবে ওয়াশিংটন। জো বাইডেনের আবেদনের পর রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এবং হাউস স্পিকার মাইক জনসন রবিবার বলেছেন, তিনি মার্কিন মিত্রদের জন্য ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের যুদ্ধকালীন সহায়তা প্যাকেজ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করবেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাবে ইসরায়েল এবং ইউক্রেন পাবে ৬ হাজার কোটি ডলার। ফক্স নিউজ চ্যানেলের সানডে মর্নিং ফিউচারকে জনসন বলেছেন, তিনি এবং রিপাবলিকানরা ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা বোঝেন এবং ইসরায়েলকে তহবিল দেওয়ার উদ্যোগ এ সপ্তাহে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। জনসন বলেন, ‘এ প্যাকেজের বিশদ বিবরণ একত্র করা হচ্ছে। আমরা সব বিকল্প এবং সম্পূরক সমস্যাগুলোও দেখছি।’ গতকাল বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে নিজেকে রক্ষার স্বাধীনতা ইসরায়েলের রয়েছে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী নীতির অংশ। তবে আমরা এমন একটি বিষয়ে নিজেদের জড়ানোর কথা ভাবছি না।’

মুখ খুলল রাশিয়া : দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে অবৈধভাবে হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই তেহরান হামলা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব সংস্থায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া। রাশিয়ার দূত বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ওই অঞ্চলে সর্বশেষ সহিংসতা উসকে দিয়েছে। দামেস্কে তেহরানের দূতাবাসে হামলার ঘটনায় পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে নতুন করে ইরানি হামলার জন্ম দিতে সহায়তা করেছে। রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের বলেন, রবিবার রাতে যা ঘটেছে তা এমনি এমনি হয়নি। ইরানের হামলা এ কাউন্সিলের লজ্জাজনক নিষ্ক্রিয়তার প্রতিক্রিয়া হয়ে উঠেছে। ইরানের কনস্যুলেটে হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হলেও নিরাপত্তা পরিষদের পশ্চিমা সদস্যরা ইসরায়েলকে ‘ভয়াবহ আক্রমণ’ নিয়ে তিরস্কার করার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সতর্ক করে দিয়েছি যে এ ধরনের কাজের পুনরাবৃত্তি এবং এ অঞ্চলে সহিংসতা বৃদ্ধির ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে। ফলাফল এখন সবার জন্য পরিষ্কার।

এরপর কী ঘটতে চলেছে : এতদিন মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক সংঘাতের বিষয়টি ছিল কেবল ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বনাম ইসরায়েল ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে ‘টিট-ফর ট্যাট’ হামলা। তবে ইসরায়েলে ইরানের নজিরবিহীন হামলার পর এবারে তা রূপ নিল বড় আকারের যুদ্ধে। বলা হচ্ছে, ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’ নামের এ অভিযানের মাধ্যমে ইরান কী করতে পারে, তার সামান্য নমুনা দেখাল মাত্র। শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের পাল্টা হামলা মোকাবিলারও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে তারা।

এদিকে ইসরায়েলের হয়ে হামলা মোকাবিলায় ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। যাতে প্রক্সি খেলার খোলস ছেড়ে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান, এমন শঙ্কা বিশ্লেষকদের। এ সুযোগে গাজায় তার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে নিতে পারে নেতানিয়াহু প্রশাসন। এমনকি রাফাতে সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ওপর যে চাপ ছিল, তাও তুলে নিতে পারে বাইডেন প্রশাসন। যাতে আবারও বলির পাঁঠা হতে পারে অসহায় ফিলিস্তিনিরা। বলা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে বড় আকারের যুদ্ধ হলে তার ফল ভোগ করতে হবে গোটা বিশ্বকেই। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়াসহ হুমকির মুখে পড়তে পারে বিশ্ববাণিজ্য।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিওর হাইয়াত জানিয়েছেন, ইসরায়েলে হামলায় ইরানকে চরম মূল্য দিতে হবে। তবে কীভাবে ইরানের হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল? এ বিষয়ে বিবিসি এক প্রতিবেদেন জানায়, প্রথমত ইসরায়েল হয়তো প্রতিবেশী দেশগুলোর কথামত কৌশলগত ধৈর্য ধরতে পারে। অর্থাৎ ইরানে পাল্টা হামলা না করে হিজবুল্লাহর মতো ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে। যদিও বহু বছর ধরে ইসরায়েল এ ধরনের হামলা চালিয়ে আসছে। দ্বিতীয়ত, ইরান যে ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা একই ধরনের হামলা চালাতে পারে। তবে এতে ইরানের পাল্টা প্রতিশোধ নেওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। এ ছাড়া ইরান যেভাবে হামলা চালিয়েছে তার চেয়ে অনেক শক্তিশালী পাল্টা হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। সে ক্ষেত্রে তারা ইরানের অত্যন্ত শক্তিশালী রিভলিউশনারি গার্ডসের ঘাঁটি, প্রশিক্ষণ শিবির ও কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টারগুলোকেও আক্রমণের নিশানা করতে পারে।

রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ : এদিকে, ইসরায়েলে হামলার পর ইরানের সামরিক বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ হোসাইন বাঘেরি বলেছেন, আমাদের অপারেশন আপাতত শেষ হয়েছে। এ অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। তবে ইসরায়েল পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করলে রাতভর বোমাবর্ষণের চেয়েও বড় পরিসরে হামলা চালানো হবে।

সর্বশেষ খবর