ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দামে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শেয়ারবাজারগুলো পতনের মুখে পড়েছে। ভারতের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। চলমান দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ঝুঁকি তৈরি করবে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে। উপরন্তু মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে কমে যেতে পারে রেমিট্যান্স আয়। যা রিজার্ভকে আরও চাপে ফেলবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল হামলার ঘটনায় অস্বস্তিতে আছি। আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহের প্রভাব বাজারে পড়বে। এসব চ্যালেঞ্জ যাতে বাজারে না আসে, তা মোকাবিলা করতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ইসরায়েলে ইরানের মিসাইল হামলার পর পুরো পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ¦ আরও ঘনীভূত হলে অর্থনীতি ও পণ্যে আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থায় কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তাও মনিটরিং করা হচ্ছে।জ্বালানি তেল, স্বর্ণের বাজারে অস্থিরতা পতনের আশঙ্কা শেয়ারবাজারে : ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাবে, এমন ধারণা থাকলেও বাস্তবে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। গতকাল সকালে এশিয়ান ট্রেডে তেলের দাম কিছুটা কমতির দিকে ছিল। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত সপ্তাহের শেষে ব্যারেল প্রতি তেলের দাম ৯২ দশমিক ১৮ ডলার পর্যন্ত হয়েছিল। গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে ধরলে সেটা ছিল সর্বোচ্চ। এরপর থেকে কমতে কমতে সেটা ৯০ দশমিক ৪৫ ডলারে নেমেছিল। সোমবার সকালে তা আরও ২০ থেকে ৩০ সেন্ট কমেছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেলে তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে বাজার বিশ্লেষকদের।
শুধু জ্বালানি তেল নয়, স্বর্ণের বাজারেও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। ইকোনমিক টাইমস বলছে, সোমবার স্পট মার্কেটে বৈশ্বিক বেঞ্চমার্ক স্বর্ণের দর ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতি আউন্সের মূল্য স্থির হয়েছে ২ হাজার ৩৫০ ডলার ৫৯ সেন্টে। তবে একই কর্মদিবসে ফিউচার মার্কেটে যুক্তরাষ্ট্রের বেঞ্চমার্ক স্বর্ণের দরপতন ঘটেছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। আউন্সপ্রতি দাম নিষ্পত্তি হয়েছে ২ হাজার ৩৬৬ ডলার ৪০ সেন্টে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সাময়িকভাবে দাম কমলেও ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার যে হুমকি দেখা যাচ্ছে, তাতে করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তেল উত্তোলন কমিয়ে দিতে পারে। এতে জ্বালানির দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যে ঝুঁকিতে পড়তে পারে দেশের অর্থনীতি : বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস-এর সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরি বলেন, ইরান-ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা এর প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই চিফ ইকোনমিস্ট বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে কিছু হলে সবার আগে প্রভাব পড়বে রেমিট্যান্স আয়ে, যা দেশের রিজার্ভকে আরও চাপে ফেলবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ যেহেতু আমদানিনির্ভর দেশ, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে। দেশের মানুষ এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে রয়েছে। জ্বালানি তেলের আরেক দফা দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে গেলে এটি শুধু সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তাই নয়, পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।