বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর

শেষ পর্যন্ত এবারের উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তাছাড়া জামায়াতে ইসলামী ও গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপিসহ সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেই দলগুলো এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা যায়। বিএনপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার রাত ১০টায় শুরু করে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষ হয় গভীর রাতে। এতে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পর বিএনপি এ সিদ্ধান্ত নেয়। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মাত্র দুজন সিনিয়র সদস্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা ধোপে টেকেনি বলে জানা যায়। উপজেলার ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিএনপির যুক্তি হলো- আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনও হবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে। তারা অংশ নিলে আওয়ামী লীগই রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েছে দলটি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনি প্রহসনের অংশীদার হতে চায় না বিএনপি। তাছাড়া সরকারের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সে কারণে বিএনপি ৮ মে থেকে শুরু হওয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান সম্পর্কে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অস্পষ্টতায় ছিলেন বিএনপির তৃণমূলের নেতারা। কারণ, বিএনপি নেতৃত্ব এত দিন সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। এরই মধ্যে প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কমবেশি বিএনপির ৪৫ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের কাছে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশনা পাঠানো হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হবে ২২ এপ্রিল। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাদের যারা প্রার্থী হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত হয়। দলের অবস্থানের বাইরে গিয়ে যারা ভোটের মাঠে নেমেছেন, তারা যদি শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার না করেন- তবে তাদের ব্যাপারে বিএনপি শেষ পর্যন্ত কতটা কঠোর হতে পারবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে কারান্তরিন করা হয়, এদের অনেকেই এখনো কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গুম, খুন অব্যাহত থাকে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং প্রশাসন ও পুলিশের প্রকাশ্য একপেশে ভূমিকার জন্য ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। এখনো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি আরও অবনতিশীল হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও নির্বাচনি প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বিএনপি আগামী ৮ মে থেকে শুরু হওয়া সব ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, তৃণমূলে কর্মীদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন করার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ নেই। সরকারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন ও ৭ জানুয়ারির নির্বাচন কেন্দ্র করে সারা দেশে তাঁদের লাখ লাখ নেতা-কর্মী মামলায় জর্জরিত। ২৭ হাজার বেশি কারাগারে গেছেন। ফলে তৃণমূলের কর্মীরা নতুন করে মামলা বা নির্যাতনের মুখোমুখি হতে চান না। এজন্যই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি তাদের দলের পুরনো অবস্থান। তারা সেই অবস্থানেই অটল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী প্রথম পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। ঈদুল ফিতরের পরপরই দলটি তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টানোর নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে জানিয়ে দিয়েছে। এর আগেই জামায়াতের অন্তত ২২ জন নেতা প্রথম ধাপের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদেরও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পাঠানো হবে।

সর্বশেষ খবর