বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

মধ্যপ্রাচ্যে নজর রেখে প্রস্তুতি নিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

মধ্যপ্রাচ্যে নজর রেখে প্রস্তুতি নিন

ইরান-ইসরায়েল সংকটে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নিজেও পর্যালোচনা করছেন, মন্ত্রণালয়গুলোকেও পর্যালোচনা করতে বলেছেন। বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ইসরায়েল-ইরান সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে যে বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে, সেটির দিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নজর রাখতে বলেছেন। মন্ত্রিসভার সব সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বলেছেন তীক্ষè নজর রাখার জন্য। এই ঘটনার পর এবং এতে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সেটি কীভাবে আমরা মোকাবিলা করব, সংঘর্ষ যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য আমরা কী করতে পারি, সেজন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন এবং সেগুলো পর্যালোচনা করতে বলেছেন। কী কী করতে হবে সেটা ঠিক করতে বলেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখতে। যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তখন যে সম্ভাব্য পরিস্থিতি হতে পারে বা বিভিন্ন সেক্টরে যে ইমপ্যাক্ট পড়তে পারে, সেটি যেন সংশ্লিষ্ট সেক্টর থেকে পর্যালোচনা করে সেটি মোকাবিলা করার জন্য যেন তারা পরিকল্পনা নেন এবং প্রস্তুতি নেন। সে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। অর্থনীতির ওপর প্রভাব বা তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রথমত আলোচনা হয়নি। অর্থনীতি বা তেলের দাম এরকম না। তিনি বলেছেন, প্রত্যেককে পর্যালোচনা করতে। তিনিও পর্যালোচনা করছেন। যখনই পরিবর্তন বা চ্যালেঞ্জ দেখব রি-অ্যাকটিভ নয়, আমরা যেন প্রো-অ্যাকটিভ হই। সে জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ব্যয় সাশ্রয়ী হতে বলেছেন কি না জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, যা যা করণীয় প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। উদাহরণ দিয়ে বলেন, হয়তো জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে, তখন তার প্রভাব কী, কী করা যায়, সেসব বিষয়ে পরিকল্পনা রাখতে বলেছেন। বৈঠকে ২০২৪ সালের প্রথম ত্রৈ-মাসিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপন পর্বে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেসব প্রকল্প বারবার প্রতিবেদনে বাস্তবায়নাধীন লেখা হচ্ছে সেগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। হয় বাস্তবায়ন করতে হবে, অথবা সেগুলো আবার মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসতে হবে। বলতে হবে যে, এই এই কারণে এগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে দ্রুত মন্ত্রিসভাকে অবহিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় ‘মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য গঠন হচ্ছে এই কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মহেশখালী মাতারবাড়ি সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথ ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার আওতায় জাপান সরকার মাতারবাড়িতে উন্নয়ন কার্যক্রম নেওয়ার জন্য উদ্বোধন করে গেছেন। মাতারবাড়িকে কেন্দ্র করে যাতে অর্থনৈতিক জোন তৈরি করা যায় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এই পুরো কাজগুলো এখন আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় থেকে করছে। সমন্বিতভাবে এসব কাজ করতে প্রধানমন্ত্রীর আওতাধীন মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। বোর্ডে অর্থমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীকে নিয়ে ১৭ জন সদস্য থাকবেন।

মাহবুব হোসেন বলেন, অথরিটির মূল কাজ হবে নির্ধারিত এলাকায় ভূমি ব্যবহারের মাস্টারপ্ল্যান করে তা বাস্তবায়ন করা। যাদের ভূমি দেওয়া হবে তারা যেন যথাযথভাবে কাজ করে। মূল লক্ষ্য হবে বিদেশি বিনিয়োগ। এ ছাড়া এক্সপোর্ট ও ইমপোর্টের নিট টাইম যেন কম হয়। যে এলাকায় মাস্টারপ্ল্যান হবে, সেখানে যেন পরিবেশ সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। লবণ চাষ, পান ও চিনির চাষও যেন সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ যেন ঘটে, তাতে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দিতে এটা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন আইন, ২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আদালতের নির্দেশে সামরিক শাসনামলে প্রণীত আইন নতুন করে করা হচ্ছে। এ জন্য আগের আইনের বাংলা করে এই আইনটি করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা যেভাবে সুযোগসুবিধা পান নির্বাচন কমিশনাররাও ঠিক সেভাবে সুযোগসুবিধা পান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের মতো সুযোগসুবিধা ও ভাতা পাবেন। শুধু বাংলা করা ছাড়া আইনের আর কোনো পরিবর্তন হবে না বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

 

সর্বশেষ খবর