শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
টেকনাফ সীমান্তে গোলাগুলির বিকট শব্দ

আরও ৬৩ সেনা-বিজিপির বাংলাদেশে আশ্রয়

বান্দরবান প্রতিনিধি

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে গতকাল একদিনেই মিয়ানমার জান্তা সরকারের অনুগত ৬৩ জন সেনা ও বিজিপি সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্রহরে (রাত ১টায়) ৪৬ জন এবং দুপুরে ১৭ জনের অনুপ্রবেশ ঘটে। এ নিয়ে তিন দিনে পালিয়ে আসা জান্তা সেনার সংখ্যা হয়েছে ২৬১ জন।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, গতকাল প্রথম প্রহরে গয়ালমারা সীমান্ত দিয়ে ৩৪ জন, জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে সাতজন এবং চাকঢালা সীমান্ত দিয়ে পাঁচ সদস্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তবে দুপুরে অনুপ্রবেশকারী ১৭ জনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে কতজন সেনা সদস্য সেটিও জানা সম্ভব হয়নি। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির আন্তর্জাতিক পিলার নম্বর ৪৫-এর আশারতলী বিওপি দিয়ে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের অনুগত বিভিন্ন বাহিনীর ১৭ জন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অনুপ্রবেশের পরপরই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সদস্যরা তাদের ১১ বিজিবি সদর দফতরে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাদের বিজিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে আসা ৬৩ জনসহ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া জান্তা সরকারের অনুগত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য সংখ্যা দাঁড়ালো ৩২৩ জনে। তাদের সবাইকে বিজিবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন জানান, একদিনে হঠাৎ করে ৬৩ জনের অনুপ্রবেশের ঘটনায় এলাকায় জনমনে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো সময়ে আরও বড় ধরনের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে গোলাগুলির বিকট শব্দ ভেসে আসছে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে। গতকাল সকাল থেকে থেমে থেমে টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় রাখাইনের বোমা ও মর্টার শেলের বিকট শব্দ শোনা গেছে। এরকম শব্দে মেরিন ড্রাইভ সড়কের আশপাশের লোকজনও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

সীমান্তবর্তী পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে এই সীমান্তে গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বাড়ির পাশে যুদ্ধ চলছে। মাঝখানে বন্ধ থাকলেও গতকাল সকাল থেকে গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।’ সীমান্তে বসবাসকারীরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির লড়াই ও গোলাগুলির শব্দে টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যংয়ের উত্তর পাড়া, লম্বাবিল, উলুবনিয়া, জিম্মখালী ও নয়াবাজার, হ্নীলা, শাহপরীর দ্বীপ, পৌরসভার জালিয়া পাড়াসহ বেশ কয়েকটি সীমান্তে তারা আতঙ্কিত। শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ইয়াছিন বলেন, ‘গতকাল সকাল থেকে সীমান্তের লোকজন রাখাইনে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন। নাফ নদে সীমান্তের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

আরেক খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমার মংডু ও বুথেডংয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ অবস্থায় টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদে ও সীমান্ত সড়কে বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড টহল বৃদ্ধি করেছে।

সর্বশেষ খবর