শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং

হাত ঘুরে কাজ পাচ্ছে বিমান

জাপানি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে আগ্রহী বেবিচক - গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পেতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে বিমান

জয়শ্রী ভাদুড়ী

হাত ঘুরে কাজ পাচ্ছে বিমান

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব কে পাবে তা নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। জাপানি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে আগ্রহী বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তাই সরাসরি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ যদি না পায় তাহলে থার্ড পার্টি হিসেবে জাপানি কোম্পানির সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস চুক্তিবদ্ধ হবে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘থার্ড টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমরা জাপানি প্রতিষ্ঠানকে দিতে চাইছি। আগামী জুলাই-আগস্টে এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই হতে পারে। জাপানি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে থার্ড পার্টি হিসেবে এ টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস নিতে চাইছে বলে শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে অফিশিয়ালি কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। আমরা জাপানি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়ে সেবার মান এবং রাজস্ব বুঝে নেব। তারা লোকালি কাউকে দায়িত্ব দিলে সেটা তাদের ব্যাপার।’ জানা যায়, জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। বিমানবন্দরের নির্মাণকাজেও রয়েছে জাপানি কোম্পানি। জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংয়ের অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ করছে। আগামী সেপ্টেম্বরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টার্মিনাল বুঝে নেবে বেবিচক। জানা গেছে, এ টার্মিনালের পরিচালনা এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজও করতে আগ্রহী জাপান। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে তাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে প্রস্তাব এসেছে। এ ব্যাপারে আগ্রহী বেবিচকও। বর্তমানে দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোকে এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসছে বিমান। বিমানের আয়ের একটি বড় অংশ আসে এ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং থেকে যা বছরে গড়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি। তবে নির্ধারিত সময়ে মালামাল বুঝে না পাওয়া, লাগেজ ভাঙা, মালামাল হারানোসহ বিমানবন্দরে নানা রকম হয়রানির অভিযোগ রয়েছে এ ব্যবস্থাপনা নিয়ে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিমানের সেবার মান নিয়ে অভিযোগ থাকার পরও তারাই এর দায়িত্বে বহাল আছে।

বিভিন্ন সময় বিমানকে বাদ দিয়ে বেবিচক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে চাইলেও কখনোই সফল হতে পারেনি। এমনকি বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা নিয়ে অন্য ধরনের বিপত্তিতেও অতীতে পড়তে হয়েছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বিমানের একটি সংগঠনের ধর্মঘটে শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। এজন্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের ২৪টি ফ্লাইটের প্রায় ৪ হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়ে। প্রতিটি এয়ারলাইনসের যাত্রীদের চেক-ইন কাউন্টার সামলানো, উড়োজাহাজে মালামাল ওঠানো-নামানোসহ বিভিন্ন যাত্রীসেবাই মূলত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা শতভাগ নিশ্চিত হয় মূলত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দাবি-পুরনো শাহজালাল বিমানবন্দরের পাশাপাশি নতুন টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সামলানোর প্রয়োজনীয় সক্ষমতা রয়েছে তাদের। পাশাপাশি বিমানের আয়ের একটি বড় উৎস এ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। তাই তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ না পেলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কার কথাও তুলে ধরা হয়েছে তাদের পক্ষে। থার্ড টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে শাহজালাল বিমানবন্দরের ব্যস্ততা বেড়ে যাবে কয়েক গুণ, তখন বেড়ে যাবে ফ্লাইটের সংখ্যাও। এর ফলে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জও বেড়ে যাবে অনেক বেশি। এ ব্যাপারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুধু থার্ড টার্মিনাল কেন এ রকম আরও তিনটি টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ সুষ্ঠুভাবে করার সক্ষমতা বিমানের রয়েছে। ৫২ বছর ধরে বিমান এ সেবা দিয়ে আসছে। থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিয়ের কাজ বিমানই করবে। বেবিচক নয়, থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সিদ্ধান্ত দেবে পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ)। থার্ড টার্মিনালে সার্ভিস দেওয়ার জন্য আরও উন্নত যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, জনবল নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণও চলছে।’ গত বছরের ৭ অক্টোবর এ টার্মিনালের সফট্ ওপেনিং বা আংশিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনীর মাধ্যমে পর্দা ওঠে মেগা প্রকল্পের। থার্ড টার্মিনাল পুরোদমে চালুর অপেক্ষায় যাত্রীরা। বেবিচক জানিয়েছে, এ বছরই পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের।

সর্বশেষ খবর