শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
প্রকৌশলী নিহত

থার্ড টার্মিনালে ঢুকে গেল বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

থার্ড টার্মিনালে ঢুকে গেল বাস

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে অস্থায়ী বাউন্ডারি ভেঙে রাইদা পরিবহনের একটি বাস ঢুকে পড়ে। এ ঘটনায় সিভিল এভিয়েশনের সিনিয়র এক ইঞ্জিনিয়ার নিহত হয়েছেন। মাইদুল ইসলাম সিদ্দিকী নামের ওই ব্যক্তি সিভিল এভিয়েশনের সিনিয়র সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। গতকাল সকাল ১০টায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সামনে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে নিরাপত্তা বাউন্ডারিতে এ ঘটনা ঘটে। বিমানবন্দর থানার এসআই সুমন চন্দ্র দাস জানান, সকাল ১০টায় রাইদা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে থার্ড টার্মিনালের নিরাপত্তা বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যায়। এ সময় রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন সিভিল এভিয়েশনের সিনিয়র সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মাইদুল ইসলাম। তাঁর মোটরসাইকেলটি রাইদা পরিবহনের বাসটির নিচে চাপা পড়ে। পরে তাঁকে গুরুতর অবস্থায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এসআই সুমন বলেন, লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়। বাসের চালক-হেলপার পালিয়ে গেছেন। তবে বাসটি জব্দ করা হয়েছে।

মাইদুলের শ্যালক মাসুদ রানা বলেন, সকালে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে কাজে বেরিয়েছিলেন মাইদুল। পরে খবর পাই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। মাইদুল বগুড়া সদর উপজেলার শামসুদ্দিন কালামের ছেলে। তিনি কাওলা সিভিল এভিয়েশন স্টাফ কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তিন বছর আগে বিয়ে করেন তিনি। তার স্ত্রীর নাম হিরানি চৌধুরী। ১২ বছর যাবৎ সিভিল এভিয়েশনে চাকরি করছিলেন মাইদুল। বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত খান বলেন, রাইদা পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তৃতীয় টার্মিনালের (টিনের তৈরি অস্থায়ী) নিরাপত্তা বাউন্ডারি ভেঙে ভিতরে ঢুকে যায়। বাসটি জব্দ করা গেলেও চালক ও হেলপার পালিয়েছেন। তৃতীয় টার্মিনালের দেয়াল ভেঙে যাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে কিছুই হয়নি।

উল্লেখ্য, রাজধানীর পোস্তগোলা থেকে উত্তরার দিয়াবাড়ী রুটে চলাচলকারী রাইদা এন্টারপ্রাইজের চালকদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালনা, নিজেদের বাসের সঙ্গে রেষারেষি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ইতঃপূর্বে এ পরিবহনের চালকদের বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটানো, ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেওয়াসহ নানা অভিযোগে বাস আটকের ঘটনা ঘটেছে। রাইদার চালকরা একই কোম্পানির অন্য বাসের সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামেন। এতে যাত্রীদের প্রায়ই ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এমন ঘটনায় প্রাণহানি কম হয়নি। ২০২২ সালের ২৬ জুন রাজধানীর নর্দায় রাইদা পরিবহনের দুটি বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আঙুল কেটে ঝুলে পড়ে এক চালকের। রাইদা পরিবহনের এক চালক জানান, চুক্তিভিত্তিক বাস চালানোর কারণেই তারা সবার আগে গন্তব্যে যেতে চান। কন্ডাক্টর ও হেলপারের বেতন, মালিকের জমা, রাস্তার চাঁদা সব দেওয়ার পর নিজের টাকা ওঠাতে হয়। তাই প্রতিযোগিতায় অন্য গাড়িকে পেছনে ফেলতে না পারলে যাত্রী পাওয়া যায় না। যাত্রী না পেলে বাড়তি আয়ও হয় না। এজন্য স্টপেজে বাস এলে আড়াআড়িভাবে আরেকটি বাস ব্যারিকেড দেওয়া হয়। যাত্রী ও বাসের স্টাফ বিশেষ করে যারা গেটে ডিউটি করে তাদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। মালিকের নির্ধারিত টাকা দেওয়ার পর চালক-হেলপারের বেতন, খোরাকি ও রাস্তার চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে হয়। গতকাল দুর্ঘটনায় পড়া রাইদা পরিবহনের বাসটি তাদের অন্য কোনো বাসের সঙ্গে রেষারেষিতে লিপ্ত ছিল কি না জানা না গেলেও বিমানবন্দরের মতো প্রশস্ত সড়কে কেন নিয়ন্ত্রণ হারাল-সে প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত বাসের চালক ও হেলপারকে আটক করা গেলেই সব প্রশ্নের জবাব মিলবে।

সর্বশেষ খবর