শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
মাঠে গেল দুই দলের কড়া নির্দেশ

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বলল বিএনপি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলীয়ভাবে এ নির্বাচন বর্জন করলেও তৃণমূলের অনেকেই ভোট করতে আগ্রহী। ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ভোট। এর মধ্যে বিএনপির ৪৫ নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। যেসব জেলায় নেতারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের সঙ্গে কেন্দ্র থেকে যোগাযোগ করে জেলার শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২২ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এ সময় পর্যন্ত দলটি দেখতে চায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নেতারা কী করেন। এ নির্দেশনা অমান্য করে যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা যায়, যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সেসব নেতার নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠাতে তৃণমূলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রসঙ্গে দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব ও ফেনী-১ আসনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক রফিকুল আলম মজনু বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সবাই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে ২২ এপ্রিলের আগেই তা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে অবশ্যই শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’ জানা যায়, তৃণমূলের কর্মী, জেলার শীর্ষ নেতাসহ দলীয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ নিয়ে গত সোমবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন। বৈঠকে নেতারা উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দেন। ওইদিন রাতেই দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়ালি সভা হয়। সভায় উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে মঙ্গলবার বিবৃতিতে জানানো হয়। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল জানান, বিএনপি সব সময় নির্বাচনের পক্ষে। যেখানে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই সেখানে ভোটের নামে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয়ের মানে নেই। সরকারের পক্ষ থেকে সিলেকশন করে দিলেই ভালো হয় কারা প্রতিনিধি। তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

যেসব উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি নেতারা : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান মুকুল চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নাটোরের ধামইরহাট উপজেলায় বিএনপি নেতা মো. আয়েন উদ্দিন ডালিম, মহাদেবপুরে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপু, কুমিল্লার মেঘনায় উপজেলা বিএনপি সভাপতি মো. রমিজ উদ্দিন, একই জেলার নাঙ্গলকোটে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. মাজহারুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় বিএনপি নেতা মো. আশরাফ হোসেন আলিম ও তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ আল রাইহান, ভোলাহাট উপজেলা বিএনপির মোহাম্মদ বাবর আলী, মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও ইয়াজদানী আলীম আল রাজী, ময়মনসিংহের ফুলপুরে পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমরান হাসান পল্লব চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। নাটোর সদর উপজেলায় বিএনপি নেতা গোলাম সরোয়ার ও বিএনপি কর্মী সাবেক ভিপি মো. ইসতেয়াক আহম্মেদ (হিরা), নলডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সরদার আফজাল হোসেন, পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফায়জুল কবির তালুকদার, বান্দরবান সদর উপজেলায় জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল কুদ্দুছ, নওগাঁর মহাদেবপুরে থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন, সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া ও যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা সফিক উদ্দিন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। আরও অনেক উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলটির অনেক নেতা প্রার্থী হয়েছেন।

সামগ্রিক প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দলে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের প্রত্যাহারের জন্য বলা হচ্ছে। এর পরও যদি কেউ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হন, তখন দল সিদ্ধান্ত নেবে।’ উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে তিন পদে ১ হাজার ৮৯১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন।

সর্বশেষ খবর