শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে সরকারি কলেজ

৩২৯ কলেজে দেড় হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য

আকতারুজ্জামান

বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজে প্রভাষকের মোট পদ ৩৩। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র সাতজন। ২৬টি পদই শূন্য। শিক্ষকশূন্যতা নিয়েই ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে ২ হাজার শিক্ষার্থীর কলেজটি। কলেজটি কোনোভাবে বেঁচে থাকলেও ছাত্রীরা পড়ালেখা শেষ করছেন সংকট নিয়েই। কলেজটিতে বাংলা বিষয়ে তিনজন প্রভাষক থাকার কথা। নেই একজন শিক্ষকও। একইভাবে কোনো শিক্ষক নেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, সমাজকর্ম, ইতিহাস, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও মার্কেটিং বিষয়ে। অর্থাৎ আটটি বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই সরকারি এ কলেজে! কলেজটির শিক্ষকের এ শূন্যপদ পূরণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর সম্প্রতি আধাসরকারি পত্র দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ মনজুরুল আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে সরকারি এ কলেজটি। দ্রুত শূন্যপদগুলোয় শিক্ষক নিয়োগ করা না হলে ছাত্রীরা অনেক কিছু শেখা থেকে বঞ্চিত হবে। আর নতুন শিক্ষার্থীরা এ কলেজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। বাইরে থেকে কয়েকজন পার্টটাইম শিক্ষক এনে ছাত্রীদের পাঠদানের চেষ্টা করা হলেও এতসংখ্যক শিক্ষকের ঘাটতি কোনোভাবে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ ২ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করে তিনি দ্রুত কলেজের শূন্যপদে পদায়ন দেওয়ার অনুরোধ জানান সরকারের কাছে।

শুধু বরগুনার এ মহিলা কলেজ নয়, দেশের সরকারি কলেজগুলোয় প্রায় দেড় হাজার প্রভাষকের পদ শূন্য। শূন্যপদ রয়েছে রাজধানীর সরকারি কলেজগুলোয়ও। আর দূরবর্তী জেলাগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শূন্যপদের সংখ্যা বেশি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজে শিক্ষকের মোট সৃষ্টপদ ৪৬। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৬টি। শরীয়তপুরে গোলাম হায়দার খান সরকারি মহিলা কলেজে ১১ শিক্ষকের শূন্যপদ রয়েছে। হাজারীবাগে শহীদ বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছা সরকারি কলেজে ছয় শিক্ষকের শূন্যপদ রয়েছে। তথ্যমতে, দেশে সরকারি কলেজ রয়েছে ৩২৯টি। নতুন জাতীয়করণ হয়েছে আরও ৩৩৪টি। সব মিলে ৬৬৩টি সরকারি কলেজ হলেও আগের ৩২৯ কলেজ হিসাব করেই শূন্যপদের তালিকা করেছে মাউশি অধিদফতর। শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানান, এ ৩২৯ কলেজের মধ্যে প্রভাষকের সৃষ্টপদ ৮ হাজার ৩৪২। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০-এর বেশি পদ শূন্য। এ ছাড়া সহকারি অধ্যাপকের সৃষ্টপদ ৪ হাজার ৩৬৬, সহযোগী অধ্যাপকের ২ হাজার ২৬০ ও অধ্যাপকের সৃষ্টপদ রয়েছে ৫২৮টি। সূত্র জানান, প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক মিলে মোট প্রায় ১ হাজার ৫০০ পদ শূন্য রয়েছে দেশের সরকারি কলেজগুলোয়। সরকারি কলেজগুলোয় শিক্ষকের শূন্যপদ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকারি কলেজগুলোয় শিক্ষকের যে শূন্যপদ রয়েছে তার আশির দশকের প্যাটার্ন অনুযায়ী। আমাদের যেভাবে শিক্ষার সম্প্রসারণ হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রাপ্যতা হিসাব করে পদগুলো সৃজন করা হয়নি। এর ফলে কলেজগুলোয় শিক্ষকের স্থায়ী সংকট তৈরি হয়েছে। কলেজগুলোয় প্রয়োজনের কম পদ সৃষ্টি হয়েছে, আর সৃষ্ট পদগুলোয়ও ঘাটতি থেকে গেছে। এটি সামগ্রিকভাবে শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি শিক্ষকনেতা শাহেদুল খবির চৌধুরী আরও বলেন, ‘কলেজগুলোয় যদি প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকে তাহলে শিক্ষাকার্যক্রম নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। আমাদের শিক্ষকরা যদিও চেষ্টা করেন এ ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়ার, কিন্তু মানসম্মত শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বিসিএসের নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রভাষক পর্যায়ে এ শূন্যপদগুলো পূরণ করা হয়। আসন্ন তিনটি বিসিএস পরীক্ষা থেকে শূন্যপদ পূরণের ব্যাপারে চাহিদা দিয়েছি আমরা।’

সর্বশেষ খবর