সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

দূষণ এখন অ্যালার্মিং পর্যায়ে চলে গেছে

---- জাকির হোসেন খান

নিজস্ব প্রতিবেদক

দূষণ এখন অ্যালার্মিং পর্যায়ে চলে গেছে

পরিবেশবাদী গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন খান বলেছেন, প্লাস্টিক দূষণ এখন অ্যালার্মিং পর্যায়ে চলে গেছে। বছরে এর আর্থিক ক্ষতি কয়েক লাখ কোটি টাকা। খাদ্যশৃঙ্খলে ঢুকে বসে আছে প্লাস্টিক। মাছে, ধানে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। ক্যান্সারসহ নানা রোগ সৃষ্টি করছে। প্লাস্টিক দূষণের মূল উৎস একবার ব্যবহার্য পলিথিন। ভারত এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশে কেন পারছে না তা বুঝতে পারছি না। পলিথিন নিষিদ্ধে যে আইনটি হয়েছিল তা একেবারেই কার্যকরী নয়। প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে পরিবেশ অধিদফতরের দায়িত্ব আছে। তবে সেই দায়িত্ব তারা কতটুকু পালন করতে পারছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। সবার আগে উৎপাদন বন্ধ করতে হবে, অন্যথায় বাজারে অভিযান চালিয়ে পলিথিন বন্ধ করা যাবে না। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পরিবেশ দূষণে সবচেয়ে বেশি দায়ী একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক বা পলিথিন। কিন্তু, এটা বন্ধে এখনো আমরা আইনি বাধ্যবাধকতায় আনতে পারিনি। ২০০২ সালে প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়, কিন্তু একবার ব্যবহার্য পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাই এ নিষেধাজ্ঞা কাজেও লাগেনি। আগামী ১ জুন থেকে এটা ব্যবহার বন্ধের একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্লাস্টিক দূষণ কমাতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো যায়। ঢাকা উত্তরের মেয়র যেমন ডেঙ্গু রোধে ছাদে পানি পেলেই জরিমানা করছেন, একইভাবে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পেলেই জরিমানা করা উচিত। তিনি বলেন, মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক দূষণের জন্য দায়ী। তাদের প্লাস্টিকের বোতল, মোড়ক তারাই সংগ্রহ করবে। এটাই নিয়ম। কীভাবে করবে তা তাদের দায়িত্ব। তারাই হয়তো প্লাস্টিক বন্ধ করতে দিচ্ছে না। এ কোম্পানিগুলোর ওপর সরকার দূষণ কর আরোপ করতে পারে। কোনো কোম্পানির প্লাস্টিক বোতল কোথাও পড়ে থাকতে দেখলে কোম্পানিকে জরিমানা করতে হবে। তখন সে বাধ্য হয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেবে। এ ছাড়া একবার ব্যবহার্য পলিথিন বন্ধ করতে হলে সবার আগে উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। এগুলো উৎপাদন ব্যয়বহুল করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে ৩০০-৪০০ শতাংশ কর আরোপ করতে হবে। একটা ব্যাগের দাম ১০ টাকা হয়ে গেলে এমনিতেই ব্যবহার করে যাবে। কিন্তু, এখন তো পলিথিন ফ্রি দিচ্ছে দোকানিরা। জাকির হোসেন বলেন, প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিংই সমাধান নয়। এর বিকল্প পণ্যে যেতে হবে। বর্তমানে মাটির থালা-বাসন, পাটপণ্য ব্যবহার আবার শুরু হয়েছে। প্রণোদনা দিয়ে এগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। সরকার বছরে ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছে। কিন্তু প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতির মাত্রা বছরে কয়েক লাখ কোটি টাকা। একজন ২০ টাকায় এক বোতল পানি কিনে পরিবেশের ক্ষতি করছে আরও অনেক বেশি। কৃষিকাজে ভূগর্ভের পানি ব্যবহার হয়। মাটিতে প্লাস্টিক থাকায় বর্ষার পানি ভূগর্ভে যেতে পারছে না। এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ব্যাপক। বাজারে গিয়ে পলিথিন খুঁজলে হবে না, এর উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনকারী  কোম্পানিগুলোকে ব্যাপকহারে করারোপ করলে উৎপাদন যেমন কমবে, সরকারের আয়ও বাড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর