মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

কেন্দ্রীয় নির্দেশ উপেক্ষা এমপি-মন্ত্রীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী না করাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন। দলীয় প্রধানের এই বার্তা আমলে নেননি অনেক এমপি-মন্ত্রী। ৮ মের প্রথম ধাপের ভোটের গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। দু-চারজন এমপি-মন্ত্রী বাদে অধিকাংশই দলীয় প্রধানের নির্দেশ প্রতিপালন করেননি। উপেক্ষিতই থাকল কেন্দ্রের নির্দেশনা। কমপক্ষে ১৪ জন এমপি-মন্ত্রীর স্বজন নির্বাচনে রয়ে গেছেন। এদের মধ্যে দুজন এমপির স্বজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে নেওয়া আওয়ামী লীগের অনেক সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় দলীয় নেতা, এমপি-মন্ত্রী কেন্দ্রীয় নির্দেশ উপেক্ষা করার এমন সাহস পেয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়নি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক এমপির খালাতো এবং মামাতো ভাই। আবদুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই হচ্ছেন ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হারুন অর রশিদ হীরা। তার মামাতো ভাই হলেন, ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম তপন। তারা দুজনই নির্বাচনি মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। পাবনার বেড়া উপজেলায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ভাই সাবেক বেড়া পৌর মেয়র আবদুল বাতেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রার্থী নিজেই। তিনি দাবি করেন ডেপুটি স্পিকার ভাই হলেও তিনি এখন আর আমার ভাই নেই। কুমিল্লায় দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে ভোটের মাঠে রয়ে গেলেন কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের শ্যালক ও ভাতিজা। লাকসাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মহব্বত আলী মন্ত্রীর শ্যালক ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় একই পদে প্রার্থী আমিরুল ইসলাম মন্ত্রীর ভাতিজা। জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও ওই আলোচিত দুই প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই এস এম নুরে আলম সিদ্দিকী। সংসদ সদস্যের ভাই হয়েও চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে এস এম নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, ব্যক্তিগতভাবে আমি গত প্রায় ৩০ বছর ধরে পারিবারিকভাবে আলাদাভাবে বসবাস করি। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের ভাগ্নে জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। এ নিয়ে উপজেলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় বর্তমান এমপি আলী আজগর টগরের পরিবারের দুজন অংশ নিচ্ছেন। এরা হলেন, তার ভাই আলী মুনছুর বাবু এবং চাচা সহিদুল ইসলাম। গতকাল মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেলেও এ দুজন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে ও ভাই। মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন মাদারীপুর-২ আসনের এমপি শাজাহান খান খানের বড় ছেলে মো. আসিবুর রহমান খান এবং তার চাচাতো ভাই পাভেলুর রহমান শফিক খান। মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি নীলফামারী-১ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকারের পরিবারের কাছে আত্মীয়রা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু এমপির চাচাতো ভাই ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদৌস পারভেজ এমপির আপন ভাতিজা। নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি মোশতাক আহমেদ রুহির চাচাতো ভাই মোস্তাফিজুর রহমান কলমাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। নোয়াখালী ৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর একমাত্র পুত্র আতাহার ইসরাক শাবাব চৌধুরী সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা থাকলেও প্রত্যাহারের শেষ সময়েও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে এমপিপুত্র আতাহার ইসরাক সাবাব চৌধুরী বলেন, এমপিপুত্র ছাড়াও আমি এদেশের নাগরিক। এলাকার নাগরিক হিসেবে ভোট করার অধিকার আমার রয়েছে। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন মানিকগঞ্জ-৩ (মানিকগঞ্জ সদর এবং সাটুরিয়া উপজেলা) আসনের এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আপন ফুপাতো ভাই মো. ইসরাফিল হোসেন। নরসিংদীর পলাশ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোড়াশাল পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ শরীফুল হক। সম্পর্কে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের স্ত্রীর বড় ভাই। মৌলভীবাজার-১ আসনের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের ভাগনে শোয়েব আহমদ বড়লেখা উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের এমপি সাহাদারা মান্নানের ছেলে মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সারিয়াকান্দি ও ছোট ভাই মিনহাদুজ্জামান ওরফে লিটন সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাচনে মাঠে চেয়ারম্যান পদে লড়াই করবেন বাবা-ছেলে ও চাচা। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করা এক পরিবারের ওই তিন প্রার্থী হলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মাজহারুল ইসলাম সুজনের পরিবারের সদস্য। ওই তিন প্রার্থী হলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম, তার ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও তার ছেলে উপজেলা যুবলীগের সদস্য আলী আফসার।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে এমপির চাচা : আপিলে মনোনয়নপত্রের বৈধতা ফিরে পান মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের চাচা আনিছউজ্জামান আনিস। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আর কোনো প্রার্থী না থাকায় এবার তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হতে চলেছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিনের ছোট ভাই।

হাতিয়ায় তিন পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী : হাতিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আয়েশা ফেরদাউস, তার ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশিক আলী অমি এবং জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন জমা দেন মুসফিকুর রহমান। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দেন মো. কেফায়েত উল্যাহ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামছুন নাহার বেগম। এর মধ্যে আয়েশা ফেরদাউস ও জাতীয় পার্টির মুসফিকুর রহমান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ের পথে মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলী অমি। এ প্রসঙ্গে অমি বলেন, আমার বাবা মোহাম্মদ আলী, আমার মা আয়েশা ফেরদাউস দীর্ঘদিন ধরে হাতিয়ার মানুষের পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় আমি সেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রার্থী হয়েছি। শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব বলেছিলাম এবং আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ছিলাম। তবে কোনো প্রার্থী না থাকায় একক প্রার্থী হয়েছি।

সর্বশেষ খবর