মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

আরও তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবহাওয়া অধিদফতর জারি করেছে ‘হিট অ্যালার্ট’। গতকাল হিট অ্যালার্ট বা তীব্র তাপপ্রবাহের সময় আরও ৭২ ঘণ্টা বাড়িয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে অধিদফতর। অর্থাৎ মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার হিট অ্যালার্ট জারি থাকবে। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়। এদিকে তীব্র দাবদাহে গতকাল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও মাদারীপুরে তিনজনের মৃত্যু হয়। তাপমাত্রা সামান্য কমলেও তাপপ্রবাহের বিস্তার বেড়ে ছড়িয়েছে ৫১ জেলায়। বিজ্ঞপ্তিতে দাবদাহে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে আরও জানানো হয়, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতিতীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। এ ছাড়া রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর, কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শ্রীমঙ্গল, চাঁদপুর জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গায়। এ ছাড়া ঈশ্বরদীতে ৪২, টাঙ্গাইলে ৪০ দশমিক ৪, যশোরে ৪০ দশমিক ২, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা মেডিকেল নার্সিং কলেজের পেছনের রাস্তায় আবদুল আউয়াল (৪৫) নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকাল সোয়া ৪টায় ওই রিকশাচালককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে শাহবাগ থানার এসআই সুমন বসাক বলেন, খবর পেয়ে ঢাকা নার্সিং কলেজের পেছনের রাস্তা থেকে অচেতন অবস্থায় ওই রিকশাচালককে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. কিশোর কুমার বলেন, এক রিকশাচালককে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তবে তার মৃত্যু হিটস্ট্রোকে হয়েছে কি না ময়নাতদন্তে জানা যাবে। জানা গেছে, আউয়ালের বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সিংহগ্রামে। বাবার নাম আজম আলী। তিনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় থাকতেন এবং শনিরআখড়ার গ্যারেজের রিকশা চালাতেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে, নগরীর যাত্রীবাহী বাসে অসুস্থ হয়ে শুকুর আলী (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল নগরের অলংকার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। শুকুর আলী লক্ষ্মীপুর সদরের দালাল বাজার এলাকার মানিক মিস্ত্রির ছেলে। তিনি সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে বাস করতেন। পাহাড়তলী থানার ওসি কেপায়েত উল্লাহ বলেন, কর্নেলহাট এলাকায় এক যাত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাসের পেছনের সিটে বসে ছিলেন, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে চালক শ্যামলী কাউন্টারে রেখে যান। সেখানেই ওই যুবক মারা যান। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার ডাসারে হিটস্ট্রোকে গতকাল দুপুরে আজগর আলী বেপারী (৬০) নামে এক কৃষক মারা গেছেন। আজগর ডাসার উপজেলার বনগ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আজগর সকালে খেতে কৃষিকাজ করতে যান। দুপুরের দিকে প্রচণ্ড গরমে ঘেমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা বাড়িতে আনার পরই তিনি মারা যান। ডাসার থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, দাবদাহে একজন মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, টানা এক সপ্তাহের দাবদাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঝরে যাচ্ছে আমের গুটি। বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। তারা বলছেন, প্রতিকূল আবহাওয়ায় এবার আমের ফলন বিপর্যয় ঘটবে। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার আম চাষি ও উদ্যোক্তা আহসান হাবিব জানান, দাবদাহে এরই মধ্যে ২০-২৫ শতাংশ আম ঝরে গেছে। ফলে খরা থেকে আম রক্ষার জন্য নিয়মিত পরিচর্যা করে যাচ্ছেন তিনিসহ অন্য চাষিরা। এতে আমের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, দাবদাহে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়। বেশির ভাগ ডায়রিয়া, আমাশয়, ঠান্ডা, কাশি, জ্বরে আক্রান্ত। দিন যত যাচ্ছে রোগীর চাপ বাড়ছে। শিশু বিশেষজ্ঞ রাজেশ মজুমদার বলেন, দাবদাহের কারণে এ হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, দাবদাহে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে পানির বোতল ও গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুমন জিহাদী এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরে তিনি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে হাটবাজার ও ফসলি খেতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে ২ শতাধিক পানির বোতল ও গাছের চারা বিতরণ করেন। তার সঙ্গে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রেজাউল করিমসহ কর্মকর্তারা। নাটোর প্রতিনিধি জানান, দাবদাহের মধ্যে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মাঝে খাবার স্যালাইন, জুস ও পানি বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল নাটোর শহরের বিভিন্ন মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের মাঝে এগুলো বিতরণ করা হয়। পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম উপস্থিত থেকে বিতরণ করেন।

সর্বশেষ খবর