মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভারতে নির্বাচন

সব দলের প্রার্থী তালিকাতেই পরিবারতন্ত্র

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভারতীয় গণতন্ত্রে একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি-যা চলমান লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বড় আকারে দেখা দিয়েছে। যদিও একটা সময় এই বাংলার ঐতিহ্য ছিল একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে যোগ্য রাজনৈতিক নেতাদের তুলে আনা।

পশ্চিমবঙ্গের লোকসভার আসন রয়েছে ৪২টি। এর মধ্যে ১২টি আসনেই প্রার্থী করা হয়েছে পরিবারতন্ত্রকে সামনে রেখে। অর্থাৎ যাদের বাবা, চাচা, দাদাসহ পরিবারের কেউ না কেউ একটা সময় রাজনীতি করতেন। পরিবারের সদস্যদের হাত ধরেই নতুনদের রাজনীতিতে পদার্পণ এবং প্রার্থী হওয়া। শেষবার ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এ পরিবারতন্ত্র ছিল না, যেটা এবার দেখা গেল। শেষবার ৪২টি আসনের মধ্যে পরিবারতন্ত্র সীমাবদ্ধ ছিল মাত্র ৩টিতে। আর চলমান লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস ৪টি, কংগ্রেস ৪টি আসনে পরিবারতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়েছে। এমনকি বিজেপি ও সিপিআইএমের মতো রাজনৈতিক দল যারা পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বিরোধিতা করে, তারাও এবার ২টি করে আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেস : ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী দলটির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। সম্পর্কে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাতিজা। উলুবেড়িয়া কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী ওই কেন্দ্রের বর্তমান সংসদ সদস্য সাজদা আহমেদ। এর আগে ওই কেন্দ্রের সংসদ সদস্য ছিলেন তার স্বামী প্রয়াত সুলতান আহমেদ। জয়নগর কেন্দ্র থেকে এবারও প্রার্থী করা হয়েছে প্রতিমা মণ্ডলকে। প্রতিমার বাবা ছিলেন দলের সাবেক সংসদ সদস্য গোবিন্দ চন্দ্র নস্কর। বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন থেকে এবার সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। বিহারের সাবেক বিজেপি সংসদ সদস্য কীর্তির বাবা ছিলেন বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভাগবত ঝা আজাদ।

জাতীয় কংগ্রেস : মালদা দক্ষিণ আসনটিতে কংগ্রেস এবার প্রার্থী করেছে সিনিয়র কংগ্রেস নেতা ও কেন্দ্রের সাবেক রেলমন্ত্রী প্রয়াত এ বি এ গনি খান চৌধুরীর নাতি সাবেক কংগ্রেস বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরীকে। ২০০৬ সালের উপনির্বাচন থেকে এই কেন্দ্রে জিতে আসছেন ঈশার বাবা ও গনি খানের পুত্র আবু হাসেম খান চৌধুরী। পুরুলিয়া কেন্দ্রে জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী সিনিয়র নেতা নেপাল মাহাতো। তিনিও রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা। তার বাবা ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য দেবেন্দ্র মাহাতো। জঙ্গিপুর আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী মোর্তাজা হোসেন ওরফে বকুল, তিনি হলেন রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের সাবেক মন্ত্রী আবদুস সাত্তারের নাতি। বকুলের বাবা আবু হেনাও ছিলেন কংগ্রেসের পাঁচবারের বিধায়ক ও ক্যাবিনেট মন্ত্রী। রায়গঞ্জ কেন্দ্রে আলী ইমরান রামজ (ভিক্টর)-কে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। সিনিয়র ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ও চারবারের বিধায়ক মোহাম্মদ রমজান আলীর ছেলে এবং বাম আমলের মন্ত্রী হাফিজ আলম সাইরানীর নাতি হলেন ভিক্টর।

বিজেপি : বনগাঁ আসন থেকে বিজেপির প্রার্থী হওয়া শান্তনু ঠাকুর মতুয়া সম্প্রদায়ের পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তার বাবা মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুর একসময় তৃণমূল মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী ছিলেন এবং তার চাচি মমতা বালা ঠাকুর বর্তমানে তৃণমূল সংসদ সদস্য। তার চাচা কপিল কৃষ্ণ ঠাকুরও তৃণমূলের সংসদ সদস্য ছিলেন, তার ভাই সুব্রত ঠাকুর বর্তমানে বিজেপির বিধায়ক। কাঁথি লোকসভা আসন থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন সৌমেন্দু অধিকারী। যার ছোট ভাই শুভেন্দু অধিকারী একজন বিজেপির বিধায়ক এবং রাজ্যটির বিরোধী দলনেতা।

সিপিআইএম : দক্ষিণ কলকাতা আসনের সিপিআই(এম) প্রার্থী সারিয়া শাহ হালিমও একটি রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা। সারিয়ার শ্বশুর হাসিম আবদুুল হালিম ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার দীর্ঘতম সময়ের স্পিকার। শিক্ষিত সারিয়ারের স্বামী ডা. ফুয়াদ হালিম সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য। শ্রীরামপুর কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী দীপ্সিতা ধর- নতুন প্রজন্মের এই নেত্রী তিনবারের বিধায়ক পদ্মনিধি ধরের নাতনি।

 

 

সর্বশেষ খবর