শিরোনাম
বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

বেনজীরের দুর্নীতি অনুসন্ধান, অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছেন হাই কোর্ট

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী আইন করা উচিত : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেনজীরের দুর্নীতি অনুসন্ধান, অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছেন হাই কোর্ট

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যে অনুসন্ধান কমিটি করেছে, সে কমিটির কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছেন হাই কোর্ট। দুই মাসের মধ্যে কমিটিকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানির পর গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। শুনানিতে আদালত বলেছেন, ভারতের মতো বাংলাদেশেও সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ‘সম্পদ বিবরণী আইন’ করা উচিত। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে এ রকম আইন করতে হবে। শুধু বাতাস খেয়ে বেড়ালে হবে না। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম সারওয়ার হোসেন ও মনোজ কুমার ভৌমিক। বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও মো. সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে শুনানিতে রিটকারীর আইনজীবী এম সারওয়ার হোসেন বলেন, এ দুটি প্রতিবেদন প্রকাশের পরও দুদক স্বউদ্যোগে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়নি। যে কারণে ৪ এপ্রিল দুদক চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হয়। এতেও কাজ না হওয়ায় ১৮ এপ্রিল বিবাদীদের আইনি নোটিস দেওয়া হয়। গত সোমবার দুদক একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু আমরা দেখেছি দুদক ১০ হাজার অভিযোগ অনুসন্ধান না করে অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দিয়েছে। যে কারণে দুদকের অনুসন্ধানে আমরা বিচারিক তদারকি (জুডিশিয়াল সুপারভিশন) চাচ্ছি।

এরপর বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানি করতে দাঁড়ান আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও সাঈদ আহমেদ রাজা। শুনানিতে এ দুই আইনজীবী বলেন, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে এসব প্রতিবেদন করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিটি পয়েন্ট ধরে ধরে জবাব দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া রিটে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। কিন্তু দুদক ইতোমধ্যে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। ফলে এখন দুদক নিষ্ক্রিয় এটা বলার সুযোগ নেই। অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে। ফলে বিষয়টিতে আদালত তদারকি বা হস্তক্ষেপ করলে স্বাধীন অনুসন্ধান হবে না। এতে কমিশন চাপ অনুভব করতে পারে। ফলে অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়া ঠিক হবে না।

তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ভারতের পাবলিক সার্ভিস হোল্ডারদের জন্য সম্পদ বিবরণী আইন আছে। চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় তার কত সম্পদ ছিল আর চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার সময় সম্পদের পরিমাণ কত তার বিবরণী একজন সরকারি চাকরিজীবীকে দিতে হয়। যোগ দেওয়ার সময় দেওয়া সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে অবসরে যাওয়ার সময় দেওয়া বিবরণীর পার্থক্য ১০ শতাংশের বেশি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমাদের দেশে এ রকম আইন এখন পর্যন্ত করতে পারিনি। দুদক আইন তো আছেই। সুনির্দিষ্টভাবে এ ধরনের আইন আমাদের দেশেও করা দরকার। করতে না পারলে অর্থ পাচার বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জন বলেন বা দুর্নীতি বলেন কোনোটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। হাই কোর্ট বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে এ ধরনের আইন করতে হবে। স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করতে হবে। শুধু বাতাস খেয়ে বেড়ালে হবে না। আমাদের শুধু চোখ খোলা রাখতে হবে। যে কারণে আপনাদের আইনজীবীদের এ ধরনের আইন করতে সরকারকে বলা উচিত। আপনাদের খালি মামলা করলেই চলবে না। রাষ্ট্রের স্বার্থ আপনাদের দেখতে হবে। সরকারি চাকরিজীবী যারা আছেন তারা চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় সম্পদের বিবরণী দেবেন। আবার চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার সময়ও দেবেন। আমরা (আদালত) খালি দেখব যে দুই বিবরণীতে ১০ শতাংশের বেশি পার্থক্য আছে কি না। আমাদের তো তাদের (সরকারি চাকরিজীবীদের) পাহারা দেওয়ার দরকার নেই। বিচারপতি বলেন, আমরা চাই দুর্নীতি না হোক। আমরা চাই অন্যায়-দুর্নীতি করে কেউ যাতে পার পেতে না পারে। এরপর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান অনুসন্ধান কমিটি গঠনের আদেশ উপস্থাপন করে বলেন, সাবেক পুলিশপ্রধানের বিরুদ্ধে এটি গুরুতর অভিযোগ। দুদক ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

এরপর আদালত সব পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন করে আদেশে বলেন, যেহেতু দুদক ইতোমধ্যে অভিযোগ অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করেছে। ফলে এ রিটে রুল জারি কিংবা অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়ার আর প্রয়োজনীয়তা নেই। যা হোক, অনুসন্ধান কমিটিকে আগামী দুই মাসের মধ্যে অভিযোগের বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো। আদেশের পর রিটকারী পক্ষের আইনজীবী এম সারওয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রিট আবেদনটির শুনানি মুলতবি রেখে আদালত আদেশ দিয়েছেন। আর বেনজীর আহমেদের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দুদকের অনুসন্ধান কমিটির কাছে অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছেন। সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে সম্প্রতি দুই পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক কালের কণ্ঠ। দুটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোয় বেনজীর আহমেদের অঢেল সম্পদের খোঁজ। দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছেই দামি এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি, বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচ তারকা হোটেলে শেয়ার, পূর্বাচলে সুবিশাল ডুপ্লেক্স বাড়ি, প্লট, গোপালগঞ্জ ও গাজীপুরে অভিজাত রিসোর্টের বিবরণ রয়েছে ওই প্রতিবেদন দুটিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর