বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
কারিগরি বোর্ডে সনদ জালিয়াতি

ডিবির জেরার মুখে সাবেক চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জেরার মুখে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এ অবস্থায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে দুই দিনের সময় দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ পাবেন তিনি। যদি তিনি সেটা না করেন এবং তার বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির তথ্য-প্রমাণ মেলে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এদিকে সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী মোছা. সেহেলা পারভীনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ডিবি প্রধান হারুন বলেন, মিরপুরের পীরেরবাগে অভিযান চালিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বাসায় জাল সনদের কারখানা তৈরি করেছিলেন। তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে সার্টিফিকেটের হাজার হাজার কাগজ এনে জালিয়াতি করতেন। সনদ জালিয়াতির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরই মধ্যে পাঁচজন আদালতে দোষ স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের সম্পর্কেও তারা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী মোছা. সেহেলা পারভীনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন যে, তিনি সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। শামসুজ্জামান ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্য ওএসডি হওয়া চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে আমরা আজ (মঙ্গলবার) ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা জানতে চেয়েছি, কীভাবে সার্টিফিকেট চুরির পর ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপলোড করে অনিয়ম করা হয়েছে মাসের পর মাস? তিনি একজন চেয়ারম্যান। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ নিয়ে যাচ্ছে, সিসিটিভি আছে, তারা দেখছেন। তবু এই জালিয়াতি হলো! আবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সার্টিফিকেটগুলোতে স্বাক্ষর করে গেছেন।

কলেজগুলোর পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করার কথা, তিনি সেটি করেননি। এই ঘটনাগুলো অবহেলায় চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক করেছেন নাকি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে করেছেন, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আপনারা জেনেও কেন ব্যবস্থা নিলেন না? তখন চেয়ারম্যান ডিবিকে বলেছেন, আমাদের লোকবল কম ছিল। নজরদারি সম্ভব হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হলো- সার্টিফিকেট কেনাবেচা হচ্ছে, সার্টিফিকেট বানানোর পর কারিগরি বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড হচ্ছে। সার্টিফিকেট বেচাবিক্রি হচ্ছে- এসব জানার পরও দায় এড়াতে পারেন কি না? তখন চেয়ারম্যান সেই দায়ের বিষয় কিছু বলেননি। এমনকি স্ত্রীর বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি জানতেন না দাবি করেছেন। ছেড়ে দেওয়া হলেও ডিবির নজরদারিতে থাকবেন চেয়ারম্যান আলী আকবর। ডিবি প্রধান হারুন বলেন, সনদ জালিয়াতির ঘটনায় তার দায় সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

স্ত্রী কারাগারে : এদিকে সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী মোছা. সেহেলা পারভীনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালত এ আদেশ দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর