বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা

অবরোধ বিক্ষোভ পুলিশের গুলি

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে মন্দিরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ তোলে নির্মাণ শ্রমিক দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা মধুখালী। দুই সহোদর হত্যার প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় জনতা। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন কয়েকজন। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মধুখালীর বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ, র‌্যাব ও রায়ট পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, ডুমাইনের পঞ্চপল্লীতে আশরাফুল (১৫) ও আশাদুল (২১) নামে দুই সহোদর নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল সকালে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেন স্থানীয় জনতা। সকাল ১০টার আগেই মধুখালী রেলগেটে মানববন্ধন করার জন্য অবস্থান নেন কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিলে তারা কিছুটা দূরে মালেকা চক্ষু হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা রাস্তায় গাছের বড় বড় গুঁড়ি ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করেন। একই সময় মধুখালীর বাগাট বাজার ও মুন্সীবাজার এলাকায়ও অবরোধ সৃষ্টি করা হয়। ফলে এ মহাসড়কের ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়ক থেকে লোকজনকে সরাতে পুলিশ টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এতে ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অবরোধকারীরা মহাসড়কে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ছোড়ে টিয়ারগ্যাস ও শটগানের গুলি। এরপর ক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ রাখার পর বিজিবি-পুলিশের হস্তক্ষেপে সড়ক থেকে বিক্ষুব্ধদের সরিয়ে দিলে বিকাল ৪টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে বাঘাট এলাকার ঈদগাহ মাঠে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ‘সর্বস্তরের জনগণ’ এর ব্যানারে মানববন্ধন হয়। এতে পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার বিচার দাবি জানানো হয়। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল মহাসড়ক দিয়ে ডুমাইনের পঞ্চপল্লীর দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাগান বাজার এলাকায় বাধা দেয়। এ সময় লোকজন একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে মধুখালীর মালেকা চক্ষু হাসপাতালের সামনে, কামারখালী ব্রিজের কাছে মাঝিবাড়ি ও বাগাটের ঘোপঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চপল্লীতে মন্দিরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ এনে নৃসংশভাবে পিটিয়ে আশরাফুল (১৫) ও আশাদুল (২১) নামের নির্মাণ শ্রমিক দুই ভাইকে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে মধুখালী থানার ইউএনও এবং ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়। এ সময় ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে হামলাকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এ সময় এলাকাবাসী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে যান। প্রায় ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর তাদের উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে কালী মন্দিরের মহিলা সেবাইত তপতি মণ্ডল জানিয়েছিলেন- সন্ধ্যায় (বৃহস্পতিবার) কালী মন্দিরে আলো জ্বালিয়ে বাড়ি চলে যান। পরে তিনি দেখেন- মন্দিরের পাশে স্কুলের শ্রমিকরা নিজেদের মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। শুনতে পান মন্দিরে আগুন লেগেছে। আমি দ্রুত মন্দিরে গিয়ে কালী মায়ের শরীরে থাকা কাপড়ের আগুন নেভাই। পরে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এরপর কি হয়েছে জানি না। কারা আগুন দিয়েছে তাও দেখিনি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর