বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
সরেজমিন

সারা দেশেই হানা দিচ্ছে নানা রোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

তীব্র গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ। অতিরিক্ত গরমে জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হিট স্ট্রোকে প্রতিদিন ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। সারা দেশের হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর ভিড়। গরমে সুস্থ থাকতে অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে না যাওয়া, সুতি কাপড় পরা, পর্যাপ্ত পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘সারা দেশে সব হাসপাতালের পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছি। রোগীদের জন্য হাসপাতালে শয্যা খালি রাখতে বলা হয়েছে। বয়স্ক এবং শিশুরা প্রয়োজন ছাড়া যেন বাড়ি থেকে বের না হয়। এ সময় মুখে খাওয়ার স্যালাইনের সংকট হবে না আশা করছি। সার্বিক পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায় সে জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’ চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র গরম, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানি খাওয়ার কারণেই ঢাকাসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে জ্বর, সর্দি, হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়া, টাইফয়েড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গরম বাড়লে আরও রোগী বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে বেড়েছে রোগীর চাপ।

ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে বর্তমানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এ তাপমাত্রায় শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এখন সুস্থ থাকতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। অপ্রয়োজনে একদম বাইরে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। যারা কাজের জন্য বাইরে থাকে তাদের ছাতা ব্যবহার বা মাথায় কাপড় দিতে হবে।’ রাজধানীর বাইরের হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে রোগীর চাপ। অনেক জায়গায় শয্যার তুলনায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি। আমাদের প্রতিনিধিরা এ-সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেছেন।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের তিনটি ওয়ার্ডে মোট শয্যা আছে ১৯৮টি। হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে মোট শয্যা আছে ১২০টি। কিন্তু চলতি গরম মৌসুমে প্রতিদিনই ভর্তি থাকে ২৫০ থেকে ৩০০ জন। চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবু সাঈদ বলেন, তীব্র গরমের কারণে এখন শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, খিঁচুনি, বমি, জ্বর-সর্দি, পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত ঘামে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়াসহ নানা রোগ হচ্ছে।

রাজশাহী : রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) প্রতিদিন বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী। মেডিকেলের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, বাড়তি রোগীর চাপে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে যথাসম্ভব সরাসরি রোদের তাপ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান তিনি।

রংপুর : রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৪৬৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

খুলনা : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যাসংখ্যার প্রায় তিন গুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। এখানে ৫০০ শয্যার বিপরীতে গতকাল রোগী ভর্তি ছিলেন ১ হাজার ৪৫৬ জন।

বগুড়া : বগুড়া মোহাম্মদ আলী ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর চাপ বেশি। যার ফলে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায়ও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অনেককে।

যশোর : যশোর আড়াই শ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গরমজনিত বিভিন্ন রোগে ৩১ জন ভর্তি হয়েছে। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েও তিনজন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ফয়সাল আহম্মেদ জানান, অতিগরমজনিত কারণে প্রতিদিন হাসপাতালের জরুরি ও বহির্বিভাগে প্রায় ৬০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম : জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে শয্যার তুলনায় তিনগুণ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শাহিনুর রহমান সরদার শিপন বলেন, গত এক সপ্তাহে শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক রোগী।

মাদারগঞ্জ (জামালপুর) : সরকারি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৫০টি। গত এক সপ্তাহে রোগী বেড়ে হয়েছে ৬১ জন।

বরগুনা : চলতি মাসে ১ হাজারের বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই শিশু। ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শয্যাসংকট দেখা গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : গত এক সপ্তাহ ধরেই ধারাবাহিকভাবে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তদের ৭০ শতাংশই শিশু। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মাত্র ১০টি বেড থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের বারান্দা বা করিডোরের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

চাঁদপুর : চাঁদপুর সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। চাঁদপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুল আজিজ জানান, এখন প্রচ গরমের কারণে শিশুরা সাধারণত জ্বর, সর্দি, কাশি, পাতলা পায়খানা ও নিউমোনিয়া রোগেই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালসহ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ। সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অরুপ পাল জানান, গত তিন দিনে সদর হাসপাতালে কমপক্ষে ৩০০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

নওগাঁ : নওগাঁ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে অন্তত ৩০০ রোগী ভর্তি হয়েছে।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি ও তীব্র দাবদাহ। যার প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যের ওপরও। এতে করে বাড়ছে জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি রয়েছে ৪০৮ জন।

বাগেরহাট : জেলার ৯টি সরকারি হাসপাতালে ৫২ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রতিদিন তিন শতাধিক শিশু ভর্তি থাকছে। মেঝেতেও রোগীতে পরিপূর্ণ।

পটুয়াখালী : তীব্র হচ্ছে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব। ডায়রিয়ার এ প্রাদুর্ভাব অনুসন্ধানে পটুয়াখালীতে এসেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাত সদস্যদের প্রতিনিধি দল। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ২১টি বেডের বিপরীতে ভর্তি ৬২ জন।

ঠাকুরগাঁও : ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত ১৭৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. রকিবুল আলম চয়ন বলেন, হাসপাতালে বেডের তুলনায় রোগী বেশি ভর্তি থাকলেও সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নীলফামারী : হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। নীলফামারী জেনালের হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আরিফুজ্জামান বলেন, অতিরিক্ত গরমে রোগীর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে।

মেহেরপুর : গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে মেহেরপুরে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে পানিবাহিত রোগ। মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্যকর ও তরল খাবার খেতে হবে।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ১০০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি ১৮১ জন।

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর ভিড় সহনীয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিষয়ের পরামর্শক আসাদুর রহমান মালিক বলেন, দাবদাহের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

সর্বশেষ খবর