শিরোনাম
শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
নির্দেশনা অমান্যকারী এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কী হবে ৩০ এপ্রিল

দৃষ্টি সবার গণভবনে

রফিকুল ইসলাম রনি

দৃষ্টি সবার গণভবনে

প্রতীকী ছবি

৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। ওইদিন সন্ধ্যা সাতটায় গণভবনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হবে। ১৬টি এজেন্ডা রাখা হয়েছে এবারের বৈঠকে। উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে যেসব এমপি-মন্ত্রীরা পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনদের প্রার্থী করেছেন তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত আসে তা জানতে দৃষ্টি সবার গণভবনে। জেলা নেতা থেকে শুরু করে উপজেলা ভোট করছেন এমন একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজনদের প্রার্থী হতে নিষেধ করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলের সভানেত্রীর এই নির্দেশনা অমান্য করে প্রথম ধাপে কমপক্ষে ১৪ জন এমপি-প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন প্রার্থী রয়েছেন। পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলোয়ও মাঠে আছেন আরও অনেক এমপি-মন্ত্রীর স্বজন। নিজেদের বাঁচাতে এমপি ও তাদের স্বজনরা নানা যুক্তি সামনে আনছেন। এতে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নির্দেশনা অমান্য করা এমপি-মন্ত্রী এবং তাদের স্বজনদের তালিকা তৈরি করছেন তারা। কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকরা রিপোর্টে এ তালিকা তুলে ধরবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক এ তথ্য জানিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা যারা মানবেন না তাদের দল করার প্রয়োজন আছে কি না প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ, দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। দলীয় প্রধানের আনুকূল্য নিয়েই তারা দলের এমপি-মন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছেন। তারা সভানেত্রীর নির্দেশনা মানবেন না- এটা হতে পারে না। সে কারণে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেন ভবিষ্যতে আর কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে সাহস না দেখায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, দলের নির্দেশনা অমান্য করে যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা উপজেলা নির্বাচন করছেন, তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এগুলো তারা ৩০ এপ্রিল দলীয় সভানেত্রীর সামনে উপস্থাপন করবেন। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে যে নির্দেশনা দেবেন, সেই মোতাবেক তারা তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সাংগঠনিক ও বিবিধ শিরোনামে প্রায় সব সমসাময়িক বিষয় ও সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়। সাম্প্রতিক ইস্যু উপজেলা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে সহায়তা করা এবং মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়দের প্রার্থিতা বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আমি মনে করি। আশা করছি, আলোচনার প্রেক্ষিতে দলীয় সভানেত্রী তাঁর প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত দেবেন।’

আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা তালিকা তৈরির কাজ শেষ করেছি। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হবে- সেটা দলীয় সভায় উত্থাপন করব। দলের সভানেত্রী এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি বলে আসছিল, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে গতকাল। বিএনপি কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেও আওয়ামী লীগ কী করবে সেটা দলীয় ফোরামেই আলোচনা হবে। তবে এখন থেকে আওয়ামী লীগকে কঠোর না হলে ভবিষ্যতে এর জন্য বড় ধরনের মাশুল দিতে হবে।

আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা নেতারাও তাকিয়ে আছেন দলীয় সভানেত্রীর দিকে। আগামী মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে কী হবে তা জানতে চান তারা। আবার অনেক এমপি-মন্ত্রী বা তাদের আত্মীয়স্বজনরাও তাকিয়ে আছেন। কারণ, প্রথম বা দ্বিতীয় ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে অন্য ধাপেরগুলোকে এমপি পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন আরও বাড়বে। এমপিরাও বিনা ভোটে আত্মীয়স্বজনদের বিজয়ী করতে প্রভাব খাটাবেন।

এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা অমান্যকারীদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত আসবে তা জানতে গণভবনের দিকেই দৃষ্টি রাখছি। সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক মানেই নতুন কিছু সিদ্ধান্ত। কাজেই উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় সভানেত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, অনেকেই মানেননি। কী সিদ্ধান্ত আসে সেদিকেই নজর রাখছি।’ বৈঠকে কী আলোচনা হতে পারে জানতে চাইলে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দিবসভিত্তিক কর্মসূচি ছাড়াও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, তাতে অনেকেই অনেক রকম যুক্তি তুলে ধরছেন। সাংগঠনিক কর্মসূচি ও উপজেলা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েই আলোচনা বেশি হবে বলে মনে হয়।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর