রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

অপরিকল্পিত উন্নয়ন ঢাকা সিটিতে

♦ নতুন এলাকায়ও হবে যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি ♦ দুর্ভোগ লাঘবে ইউটিলিটি ডাক্টের বিকল্প নেই : নগর বিশেষজ্ঞ

হাসান ইমন

অপরিকল্পিত উন্নয়ন ঢাকা সিটিতে

রাজধানীতে বছরজুড়েই চলছে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি। ঢাকার যানজট নিরসন এবং জনদুর্ভোগ কমাতে বছরের পর বছর ধরে সরকার এবং সিটি কপোরেশনের তরফে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। বছরজুড়েই বিভিন্ন সেবা সংস্থা ঢাকার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করছে। তবে ২০১৬ সালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নতুন করে ৩৬টি ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। সেখানেও চলছে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ। দুই সিটিতে ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণের উদ্যোগ শুধু ঘোষণা এবং কমিটিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনদুর্ভোগ, যানজট ও বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণ করতেই হবে। পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য এর বিকল্প নেই। ইউটিলিটি ডাক্ট হলো একটি প্যাসেজ যা বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ক্যাবলসহ অন্যান্য সেবার লাইনগুলো ধারণের জন্য নির্মাণ করা হয়। এটা ভূগর্ভস্থ বা মাটির ওপরেও করা যায়।

জানা যায়, নগরবাসীর সেবার জন্য ডিপিডিসি, তিতাস, ওয়াসাসহ রয়েছে ৫৬টি সংস্থা। সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে সিটি করপোরেশন নতুন রাস্তা, ফুটপাত তৈরির পরের মাসেই তা কেটে স্যুয়ারেজ লাইন বসাচ্ছে ওয়াসা। কখনো রাস্তা খুঁড়ে বিটিসিএল নিয়ে যাচ্ছে টেলিফোনের লাইন। আবার কখনো ডিপিডিসি বিদ্যুৎ লাইন নিয়ে যাচ্ছে। নাগরিক সেবা বাড়াতে সব সংস্থার সমন্বয় ঘটানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিপত্র জারি করা হলেও এর কোনো কার্যক্রম নেই। যখন তখন খোঁড়াখুঁড়ি চলছেই। যদিও এ সমস্যা উত্তরণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডে ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সংস্থাগুলো। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়নে প্রাথমিকভাবে ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার কাজের অনুমোদন দেয় সরকার। এ প্রকল্পে সড়ক, ফুটপাত, নর্দমা, খাল সংস্কারসহ ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণের কথা রয়েছে। প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ৮৯ কোটি ও ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে ২০০ কোটিসহ মোট ৩০০ কোটি টাকা নিয়ে কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে কিছু রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণের উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের কাজ শুরু এবং কয়েকটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু প্রকল্পের ভিতরে ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণের কথা রয়েছে সেটা অবশ্যই হবে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া নতুন ১৮ ওয়ার্ডে ২০১৭ সালে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে দুই প্রকল্পে ১ হাজার ২৮৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। একটি প্রকল্পে শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল ও সারুলিয়া ইউনিয়নের সড়ক অবকাঠামো এবং ড্রেনেজব্যবস্থা উন্নয়নে ৭৭৩ কোটি ৯৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আর দ্বিতীয় প্রকল্পে মান্ডা, ডেমরা, নাসিরাবাদ ও দক্ষিণগাঁও ইউনিয়নের জন্য ৫১৫ কোটি ৫৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে রাস্তা, নর্দমা, ফুটপাত ও ব্রিজ নির্মাণের কাজ হয়েছে। কিন্তু ওই সময়ে ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় ডাক্ট স্থাপন বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে অফিস আদেশ দেওয়া হয়। কমিটিতে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলীকে আহ্বায়ক এবং নির্বাহী প্রকৌশলীকে (বিদ্যুৎ) সদস্যসচিব করা হয়েছে। একই চিঠিতে আরও বলা হয়, গঠিত এ কারিগরি কমিটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত এলাকায় বিভিন্ন সংস্থার সার্ভিস-ইউটিলিটি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন, ইন্টারনেট-ডিশ লাইন)-সংক্রান্ত লাইন-ক্যাবল নিরাপদভাবে ভূগর্ভস্থ করার জন্য কমন সার্ভিস ইউটিলিটি ডাক্ট স্থাপন বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে দাখিল করবে। এ বিষয়ে কমিটির অন্যতম সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কমিটি করা হলেও আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিব এ-সংক্রান্ত কোনো কাজে আমাদের ডাকেননি। তাই এ-সংক্রান্ত কোনো কিছুই আমার জানা নেই।’ জানতে চাইলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত কোনো কমিটি হয়েছে কি না জানা নেই। তবে ইউলিটি ডাক্ট করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। কারণ সংস্থাগুলো এক হওয়া কঠিন।’ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘বর্তমান ঢাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি। এ খোঁড়াখুঁড়িতে যানজট, বায়ুদূষণসহ নানা সমস্যা তৈরি হয়। তবে দুই সিটির পুরনো ওয়ার্ডগুলোয় ইউলিটি ডাক্ট তৈরি চ্যালেঞ্জ হলেও নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোয় করতে অসুবিধা হবে না। কিন্তু এ কাজে সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। কারণ একেক সংস্থা একেক প্রকল্প নিচ্ছে। যত প্রকল্প তত টাকা। সবাই প্রকল্প নিজেরাই বাস্তবায়ন করতে চায়। সরকারকে প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রগতি দেখায়। কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অথচ যদি ইউটিলিটি ডাক্ট করা হয় তাহলে খরচ অনেক কমে যাবে। আর নাগরিক ভোগান্তিও থাকবে না।’

সর্বশেষ খবর