রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
দেনা ৭৭৯ কোটি টাকা

গ্যাসের জন্য বন্ধ শাহজালাল সার কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিলেটের শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল)। দেনা পরিশোধ করতে না পারায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড। এসএফসিএলের কাছে জালালাবাদ গ্যাসের বকেয়া জমেছে প্রায় ৭৭৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া জালালাবাদ গ্যাস আগের চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি মূল্য নির্ধারণ করায় গ্যাস কিনতে পারছে না কোম্পানিটি। এদিকে, কারখানা বন্ধ থাকায় প্রায় ১২৫ কোটি টাকা মূল্যের সার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সংকট কাটিয়ে কবে নাগাদ সারকারখানার চাকা ঘুরবে- বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড উৎপাদনে যায় ২০১৬ সালেল ১৪ আগস্ট। চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিংকে সঙ্গে নিয়ে কারখানাটি উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটিতে ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা ঋণ দেয় চীন। প্রতিদিন ১ হাজার ৭৬০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদনে সক্ষমতাসম্পন্ন কারখানাটি প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৪৫০ টন উৎপাদন করে আসছিল। সারের সঙ্গে উপজাত হিসেবে উৎপাদন হতো তরল এমোনিয়া। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই দফা বন্ধ হয় কারখানার উৎপাদন। গত অক্টোবরে বিদ্যুতের সাবস্টেশনে গোলযোগ থেকে পাওয়ার হাউসের বয়লার শাটডাউন হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় টানা ৩৩ দিন বন্ধ ছিল। সবশেষ গত ১৩ মার্চ গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ হয় কারখানাটি। প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকায় চলতি অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ৩ লাখ ৮০ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও এখন পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার টন ইউরিয়া। সূত্র জানায়, শাহজালাল ফার্টিলাইজার সারকারখানা নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখানো হলেও প্রকল্পটি লাভের মুখ দেখেনি। এখন পর্যন্ত কারখানা থেকে উৎপাদিত সার বিক্রি বাবদ ৫৫৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হলেও জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির কাছে পাওনা ৭৭৯ কোটি টাকা। এসএফসিএলর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিয়াবুল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। প্রতি ইউনিট গ্যাস ৪ টাকা থেকে ১৬ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি টন সার উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ৩৬ হাজার টাকা, বিক্রি করা হয় ২৫ হাজার টাকায়। প্রতি টনে লোকসান গুনতে হয় ১১ হাজার টাকা। এই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে শিল্প, কৃষি ও অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও জানান, শুধু গ্যাসের জন্য কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। জালালাবাদ গ্যাসের পাওনা প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এই টাকা কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। জালালাবাদ গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন উত্তর) প্রকৌশলী লিটন নন্দী জানান, শাহজালাল সারকারখানায় বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা আসলে আবার গ্যাস সরবরাহ করা হবে। শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) গোপাল চন্দ্র ঘোষ জানান, কেবলমাত্র গ্যাস সরবরাহ না থাকায় কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। এখন আমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে।

সর্বশেষ খবর