ছয় দিনের সরকারি সফর শেষে থাইল্যান্ড থেকে আজ দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ থাইল্যান্ডের স্থানীয় সময় সকালে ব্যাংকক ত্যাগের কথা রয়েছে তার। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
শেখ হাসিনা থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে ২৪ এপ্রিল বিকালে সে দেশে পৌঁছান। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর গত ৫২ বছরের মধ্যে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম সফর ছিল এটি। দুই বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে ‘সহযোগিতার নতুন জানালা’ উন্মোচিত হবে- এমনটিই বলা হয়েছিল এই সফরের শুরুতে। তাৎপর্যপূর্ণ এ সফরে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি।
সফর চলাকালীন ২৬ এপ্রিল শেখ হাসিনা থাই প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে গভর্নমেন্ট হাউসে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। উভয় নেতার উপস্থিতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং একটি অভিপ্রায় পত্র মোট পাঁচটি নথি স্বাক্ষরিত হয়। নথির মধ্যে রয়েছে, সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি, জ্বালানি সহযোগিতা, শুল্ক বিষয়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তা এবং পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক এবং ২০২৪ সালের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) অভিপ্রায় পত্র।এ ছাড়া বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ কামনা করে বলেছেন, বাংলাদেশি চিকিৎসা কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে থাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাকে প্রস্তাব দিয়েছি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুবিধায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সফরকে ‘প্রতিবেশী’ নীতির ওপর বৃহত্তর ফোকাসের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সফর দুই দেশের জন্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতিকে আরও নবায়নের চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই সফর। এ ছাড়া, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনার বিকাশেও জোগাবে প্রয়োজনীয় অনুপ্রেরণা। সফরের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসে থাই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজেও যোগ দেন। গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে থাই কুহ ফাহ ভবনের সামনে তাকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা জানানো হয়।
সফরের অংশ হিসেবে ২৫ এপ্রিল জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি সব বিশ্বনেতাকে যুদ্ধ, আক্রমণ এবং আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান জানান। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং এসক্যাপের নির্বাহী সচিব আরমিদা সালসিয়াহ আলিসজাবানা ইউএনএসক্যাপ সম্মেলনস্থলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সফরসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে। ডুসিট প্রাসাদের অ্যামফোর্ন সাথার্ন থ্রোন হলে থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন এবং রানি সুথিদা বজ্রসুধা-বিমলা-লক্ষণের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। থাইল্যান্ড আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় করেন।