সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ

দিনমজুর দম্পতিকে ইউএনওর শোকজ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দুটি কার্ড থাকলেও দীর্ঘ ৮ বছরে এক ছটাক চাল না মেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে শোকজ পেলেন মমিনুর-ছকিনা দম্পতি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, সমবায় ও সহকারী প্রোগ্রামারকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন ইউএনও। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিজে আপস করার চাপ দেন বলে দাবি করেন অভিযোগকারী। এতে সম্মতি না দেওয়ায় অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে গত ১৮ এপ্রিল শোকজ পাঠান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসনা আকতার। সেখানে দুই কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দাখিল করতে ব্যর্থ হলে তাদের উভয়ের কার্ড বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। সম্প্রতি শোকজের জবাবও দিয়েছেন সরকারি সুফল বঞ্চিত এই দম্পতি। একই পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে কার্ড করে নিয়ে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে চাল আত্মসাৎ করা ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে গত ২৭ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী দিনমজুর মমিনুর ইসলাম। তিনি আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বর ম্যালম্যালির বাজার এলাকার মৃত আবদুস সামাদের ছেলে। ছকিনা খাতুন তার স্ত্রী। জানা গেছে, হতদরিদ্র শ্রমিক দিনমজুর পরিবারের মানুষদের মাঝে স্বল্প মূল্যে চাল বিক্রি করতে সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করে। প্রথম দিকে ভর্তুকি মূল্যে ১০ টাকা কেজিদরে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি হারে চাল বিক্রি শুরু করে সরকার। পরবর্তীকালে দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা কেজিদর করা হয়। স্থানীয়রা এ কারণে এ কার্ডকে ১০ টাকার কার্ড নামেই জানেন। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার এনামুল হক ভরসা চালের কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ২০১৬ সালে দিনমজুর মমিনুর ইসলামের কাছ থেকে তার ও তার মায়ের পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করেন। পরিচয়পত্র নিয়ে উপজেলা খাদ্য অফিস থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড করলেও তা মমিনুর ইসলামের কাছে গোপন রাখেন ডিলার ভরসা। গত ১৮ সালে মমিনুর ইসলামের মা রশিদা বেগম মারা গেলেও তার নামে বরাদ্দের চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন ডিলার এনামুল হক ভরসা। অপরদিকে গেল বছর সরকার কার্ডধারীদের তথ্য ডিজিটাল করায় বিপাকে পড়েন ডিলার এনামুল হক ভরসা। কারণ কার্ডধারীর আপডেট ছবি ও আঙুলের ছাপ লাগবে। তখন কৌশলে ডিলার এনামুল হক ভরসা মৃত কার্ডধারী রশিদার পুত্রবধূ ছকিনার নামে কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ছকিনা ও তার স্বামী মমিনুল ইসলামের ছবি ও আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেন। এরপর মৃত রশিদার স্থলে তার পুত্রবধূ ছকিনার নামে কার্ড তৈরি করেন ডিলার ভরসা। একই সঙ্গে দিনমজুর মমিনুর ইসলামের নামের কার্ডের তথ্যও ডিজিটালে হালনাগাদ করে কার্ড দুটি নিজের কাছেই রেখে দেন ডিলার এনামুল হক ভরসা। স্ত্রী ছকিনার নামের কার্ডটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দিনমজুর মমিনুর নিষ্ফল ঘুরেছেন ডিলারের দুয়ারে। পরে অন্য মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালুর দিন থেকে দিনমজুর মমিনুর ইসলামের নামে কার্ড ও চাল বরাদ্দ ছিল যার কার্ড নম্বর-১৬৯ এবং তার মৃত মা রশিদার পরিবর্তে তার স্ত্রী ছকিনার কার্ড নম্বর-১৪৮০। পরিবারে দুটি কার্ড থাকার পরও এক ছটাক চালও কিনতে পারেননি দিনমজুর মমিনুর ইসলাম-ছকিনা দম্পতি। অবশেষে ২৭ মার্চ তাদের নামে বরাদ্দকৃত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড ও দীর্ঘদিন ধরে আত্মসাৎ করা চাল উদ্ধার এবং অভিযুক্ত ডিলার এনামুল হক ভরসার বিরুদ্ধে বিচার দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মমিনুল ইসলাম। আদিতমারী উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক হাসনা আখতার বলেন, সত্য উদঘাটনের জন্য বাদীকে আপস করার কথা বলেছি। বলতেই পারি। তবে শোকজের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, অভিযোগকারীকে শোকজ করাটা দুঃখজনক। তিনি শোকজ না করলেও পারতেন। সেটা খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে করেছেন হয়তো। তবে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পৌঁছেছে। বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর