মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
ভারতে নির্বাচন

লোকসভা প্রার্থীদের কাছে তাপপ্রবাহই এখন বড় চ্যালেঞ্জ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

প্রতিপক্ষকে সামলানোর পাশাপাশি ভারতের চলমান লোকসভা (সংসদের নিম্নকক্ষ) নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাপপ্রবাহ। দেশটির ১৮তম লোকসভা নির্বাচন মোট সাত দফায় ভোট নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই দফায় ভোট নেওয়া হয়ে গেছে; বাকি রয়েছে এখনো পাঁচ দফা। কিন্তু গ্রীষ্মের অসহ্য তাপ সামলানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ প্রার্থীদের কাছে। কারণ ইতোমধ্যেই গত শুক্রবার দ্বিতীয় দফার ভোটকালে তাপপ্রবাহে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে কেরালায়। সোমবার আরও দুজনের মৃত্যু হয়। প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে ইতোমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের সব সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে ছুটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু বেসরকারি স্কুলে সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ক্লাস চালু থাকছে। বেলা ১১টার পর রাস্তাঘাট কার্যত খাঁখাঁ করছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না।

বাইরে বেরোলেও তাপপ্রবাহের হাত থেকে রক্ষা পেতে সকাল-সকাল কাজ সেরে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ। রোদ্রের তাপে শুকিয়েছে নদীর পানি। শুকিয়ে যাচ্ছে মাঠ-ঘাট-রাস্তা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে যারা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন, সেই পুলিশের অবস্থা আরও দুর্বিষহ। কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের দেখা গেল বারবার মুখে ও মাথায় পানি ব্যবহার করছেন, যাতে গরম থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যায়। আবহাওয়া দফতর বলছে, পশ্চিমবঙ্গে এ তাপপ্রবাহ চলবে আরও ৪-৫ দিন। বুধবার পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের আট জেলাতে তীব্র তাপপ্রবাহের লাল সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতি এবং শুক্রবারেও বেশ কয়েক জেলায় চরম তাপপ্রবাহের কমলা সতর্কবার্তা। নতুন করে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ৫ মে থেকে কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টি শুরু হবে।

ওড়িশা, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের কিছু জায়গাও এ তাপপ্রবাহ চলতে থাকবে। তাপপ্রবাহের হাত থেকে মুক্তি পাবে না দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানাও। আগামী ১ মে পর্যন্ত এ তাপপ্রবাহ চলতে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। দিল্লিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। মুম্বাইতেও ৩৯ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকবে পারদ। বেঙ্গালুরুতে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন গেছে রবিবার, তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপপ্রবাহ চলছে ওড়িশাতেও, রাজ্যের অন্তত ২৭টি জায়গায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। ত্রিপুরাতেও সব রাজ্য সরকারই স্কুলগুলোতে গরমের ছুটি বাড়িয়ে ১ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রচারণায় বেরিয়ে তীব্র দাবদাহে মেজাজ হারাচ্ছেন তারকা প্রার্থীরাও। কেউ আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দুই দিন আগেই বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের হেতমপুর পঞ্চায়েত এলাকায় এক নির্বাচনি প্রচারণে গিয়ে মেজাজ হারান বীরভূম আসনের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়। উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করায় নিজের দলের কর্মীকেই ইডিয়ট বলেন শতাব্দী রায়। গরম থেকে বাঁচতে তারকা ক্রিকেটার বহরমপুর আসনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ইউসুফ পাঠান খাচ্ছেন সাধারণ খাবার। সাধারণ বাঙালি খাবারই তার বেশি পছন্দ। গুজরাটি ক্রিকেটার হলেও এখন বর্তমানে আলুভাজা, ভাতসহ মাছ এবং পাঁচ তরকারি সবজি থাকছে তার পাতে। পাশাপাশি গরম থেকে বাঁচতে পাতে থাকছে টক দই।

দাবদাহের কারণে প্রার্থীদেরও যে কষ্ট হচ্ছে সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী এবং ব্যারাকপুর লোকসভা আসনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পার্থ ভৌমিক। তিনি জানান ‘আমার খুব খারাপ লাগছে যে এত তাপপ্রবাহের মধ্যে কর্মীদের নিয়ে আমাকে প্রচারণা করতে হচ্ছে। কিন্তু কষ্ট স্বীকার করতেই হবে। আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি অর্থাৎ রোদের তাপ বাড়ার আগেই সকাল-সকাল আমাদের প্রচারণাটা শেষ করে দেওয়া যায়।’ ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং জানান ‘গরমের কারণে ঘুমটা কম হচ্ছে তা ছাড়া অন্য কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তবে দলীয় কর্মীদের এ গরমে বের হতে একটু সমস্যা হচ্ছে।’

প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে নির্বাচন করা নিয়ে ইতোমধ্যেই মুখ খুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জিও। নির্বাচনি প্রচারণা থেকেই তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য প্রতিবছর ঠিক এ সময়টাতেই নির্বাচন ফেলা হয়। আর অন্যবার যদিওবা ৮ থেকে ১০ মে’র মধ্যে হয়ে যায়, এবার তো ১ জুন পর্যন্ত নির্বাচন চলবে। তারপর ৪ জুন গণনা হবে। মমতার প্রশ্ন ‘কাকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য? বিজেপিরা কি বুঝতে পারে না এত গরমে মানুষের কষ্ট হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর