শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

গাজীর এপিএসের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীর এপিএসের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক

এক যুগের বেশি সময় ধরে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এমদাদুল হক ওরফে দাদা এমদাদ। এই সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। রাজধানীতে নামে-বেনামে গড়েছেন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সূত্র জানায়, গত ২০ মার্চ দুদকের উপ-পরিচালক (অনুঃ ও তদন্ত-১) নারগিস সুলতানার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাসকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

দুদক জানায়, এপিএস এমদাদের নামে পৃথক ফাইল খোলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ গ্রহণ করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ফাইল খোলা হয়। এরপর গত ৩ মার্চ পৃথক ফাইলে তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের সহকারী একান্ত সচিবদের (এপিএস) ষষ্ঠ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হয়। ষষ্ঠ গ্রেড অনুযায়ী একজন এপিএস সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ হাজার ১০ টাকা বেতন গ্রহণ করতে পারেন। সর্বোচ্চ বেতন হিসাব করলে এমদাদুল হক গত ১৩ বছরে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা বেতন উত্তোলন করেছেন। জানা যায়, দক্ষিণ বনশ্রী জামে মসজিদ-৪ এর সঙ্গে লাগোয়া উঁচু দেয়ালঘেরা ভবনটি এমদাদুল হকের। কে ব্লকের ১৩/৩ নম্বর রোডের ৩০/বি-৩০/সি বাড়ি এটি। বাসাবোতে একটি ১০ তলা ভবনে এমদাদের রয়েছে আটটি ফ্ল্যাট। একই এলাকার ছয়তলা আরেকটি ভবনে রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। ৩৬ নম্বর উত্তর বাসাবোর বেস্ট লিভিং লিমিটেডের বেস্ট বেয়ারেক লিভিং অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন এমদাদ। সেখানে দুটি ফ্ল্যাট আছে তার। আবাসন ব্যবসায়ও বিনিয়োগ করেছেন এমদাদ। রিমঝিম আবাসনের ১৫ শতাংশ শেয়ার এমদাদের নামে রয়েছে। এ ছাড়া রূপগঞ্জের বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প থেকেও নামে-বেনামে প্লট নেন তিনি। অভিযোগে আরও জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভার দরগাহপাড়া গ্রামের মন্টু মিয়ার ছেলে এমদাদুল হক। এক যুগ আগেও ছিলেন অতি সাধারণ মানুষ। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে থেকে কয়েক বছরে শাহজাদপুরে কয়েক কোটি টাকার জায়গা, বাড়ি ও মার্কেট গড়ে তুলেছেন। এপিএসের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি আধা বিঘা জমির ওপর একটি টিনশেড বাড়ি ক্রয় করেন। শাহজাদপুরের দ্বারিয়াপুর পাতিলপট্টিতে একটি মার্কেট আছে তার। মাঝখানে সাদা তিনতলা ভবন। ভবনসহ ওই মার্কেটে অন্তত ২২টি দোকান আছে। দ্বারিয়াপুর দক্ষিণে সম্প্রতি কয়েক কোটি টাকা দিয়ে আরও একটি ভবন কিনে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। প্রায় ৩ শতাংশ জায়গার ওপর পাঁচতলা ভবনের দোতলা পর্যন্ত করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিতাস গ্যাসের বিতরণ লাইন থেকে পাইপ টেনে সেখান থেকে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ দিয়েছেন এমদাদ। রূপগঞ্জে এমদাদের ব্যবস্থাপনায় প্রায় দেড় লাখ আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এর মধ্যে তারাব বেড়িবাঁধ, মোগরাকুল, বরাব, খাদুন, মৈকুলী, খিদিরপুর, নয়াপাড়া, বড়ভিটা, আরাফাতনগরসহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশপাশের বেশির ভাগ ভবন ও কারখানায় এই সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি আবাসিক সংযোগে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা এককালীন দিতে হয়। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে আবারও কিছু টাকা দিলে পুনরায় সংযোগ পাওয়া যায়। তবে আবাসিক সংযোগে গ্যাসের চাপ বুঝে সর্বনিম্ন ২ থেকে ১৫ লাখ টাকাও দিতে হয়।

সর্বশেষ খবর