শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আমাকে সরিয়ে কাকে আনবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমাকে সরিয়ে কাকে আনবে
যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিজ ঘর সামলাতে হবে, তাদের কাছ থেকে মানবাধিকারের সবক নিতে হয়, এটা দুর্ভাগ্যের ♦  আন্দোলন দমনে পুলিশ আমেরিকার স্টাইল গ্রহণ করতে পারে ♦ আমরাও অবজারভার টিম পাঠাব দেখি কেমন নির্বাচন হয় ♦ চৌদ্দ দল আছে, থাকবে

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাম ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আমরা সব সময় মনে করি অতিবাম খুব প্রগতিশীল, তারা খুবই গণমুখী দল। আমার প্রশ্ন হচ্ছে-ঠিক আছে তারা আমাকে উৎখাত করবে। পরবর্তীতে কে আসবে, সেটা কি ঠিক করতে পেরেছে? তারা কাকে আনতে চায়, সেটা কিন্তু স্পষ্ট না। আর সেটা স্পষ্ট না বলেই তারা কেউই জনগণের সাড়া পাচ্ছে না।

গতকাল দুপুরে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক থাইল্যান্ড সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও উপজেলা নির্বাচন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুজন বাঙালি নিহত হওয়া, সে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এরপর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক টিটু উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন। এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যারা আন্দোলন করে করুক। আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু আমাকে সরিয়ে কাকে আনবে, সে বিষয়ে বিরোধীরা নিজেরাও জানে না। আর এটা তাদের রাজনীতির বড় দুর্বলতা। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর জনগণের প্রতি নির্বাচন বর্জনের আহ্বান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষ কেন ভোটে যাবে না! ভোট দেওয়া তো তার অধিকার। তার এলাকায় সে কাকে চায়, তাকে সে ভোট দেবে। তাকে ভোটের অধিকারে হস্তক্ষেপ কেন করা? এখন অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করছে। বর্জন করে কেন? কারণ আসলে তাদের নির্বাচন করার মতো সক্ষমতাই নাই। পার্লামেন্ট ইলেকশন করতে হলে আপনাকে তো পাবলিকের কাছে দেখাতে হবে যে, আপনার পরবর্তী নেতৃত্বে কে আসবে বা প্রধানমন্ত্রী কে হবেন বা নেতা কে হবেন। আপনার কাছে যদি উপযুক্ত নেতা না থাকেন, তখন তো আপনাকে একটা ছুতো খুঁজতে হয়। হ্যাঁ, ইলেকশন করলাম না, বিরাট ব্যাপার দেখালাম। বাস্তবতা তো সেটাই। আমাদের দেশে তো ওইটাই হচ্ছে এখন। তিনি বলেন, একটা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে যদি পাবলিকের কাছে দেখান, পাবলিক তো ওটা নেবে না। পলাতক আসামি, তাকে যদি দেখান, পাবলিক নেবে না। রাজনীতি করতে গেলে ঝুঁকি নিতে হয়। আমিও তো ঝুঁকি নিয়েই দেশে এসেছিলাম। তিনি বলেন, একদিকে জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে, অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী-যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, তারা রাজনীতি করার অধিকার পাচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে দেশে ফিরি। রেহানাকে (শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে) জিয়াউর রহমান পাসপোর্ট নবায়ন করতেই দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারীদের দমাতে পুলিশ যেভাবে বল প্রয়োগ করেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক আন্দোলন দমাতে সরকার সেই ‘কৌশল’ নেবে কি না-সেই প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার মনে হয় আমাদের নতুন পথ নিয়ে নেওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা যদি আমেরিকার স্টাইলে আন্দোলন বা আমাদের পুলিশকে বলে দিই যে আমেরিকার পুলিশ যেভাবে আন্দোলন থামায় সেটা অনুসরণ করতে পারে, সেটা কি বলে দেব? সেই ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের (বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ) কথা মনে আছে? আমি বলেছিলাম ধৈর্য ধরতে। যে কারণে পুলিশ ধৈর্য ধরায় তাদের (পুলিশ) পিটিয়ে মেরেছে, সেই সঙ্গে তাদের (পুলিশের) হাসপাতালে আক্রমণ, গাড়ি পোড়ানো-কাজেই আমার মনে হয় এখন আমাদের পুলিশ কিন্তু আমেরিকান স্টাইলে আন্দোলন দমানোর স্টাইলটা নিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের নিজ ঘর সামলানোর পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের মানবাধিকারের সবক দিতে আসে। অথচ প্রতিনিয়ত তাদের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। ঘরে ঢুকে মায়ের সামনে ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গুলি করে একেবারে নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে। এটাও তো তাদের দেখা উচিত। নিজের ঘর আগে সামলানো উচিত। তিনি বলেন, আমেরিকায় বিভিন্ন স্কুল, শপিং মল ও রেস্টুরেন্টে অনবরত গুলি হচ্ছে, আর মানুষ মারা যাচ্ছে। এমন কোনো দিন নেই, সে দেশে গুলি করে মানুষ মারা হচ্ছে না। তাদের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ করে তিনি বলেন, এর আগেও আমাদের বাংলাদেশি কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি এবং বিচার করে তারা আমাকে জানিয়েছে। আমাদের যেটুকু করার সেটা আমরা করে যাচ্ছি। প্রতিবাদ শুধু এখানেই না, আমেরিকায় বসেও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। আমাদের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো এর প্রতিবাদ করছে।

ইতিহাসের ‘সব থেকে সুন্দর নির্বাচন’ ২০২৪ সালে হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করেই আমরা নির্বাচন করেছি। বাংলাদেশের পুরো নির্বাচনের ইতিহাসটা দেখেন, সেই পঁচাত্তরের পর থেকে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, ’৭৭ সালের হ্যাঁ-না ভোট থেকে যতগুলো নির্বাচন, প্রতিটি নির্বাচনের যদি তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন যে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিটি নির্বাচনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চত করার নির্বাচন হয়েছে। যেটা আমাদের দীর্ঘদিনের লক্ষ্য ছিল, আমরা সংগ্রাম করেছি এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, আমরাই আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, সেটা ভুলে গেলে তো চলবে না। আরেক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমার শক্তি জনগণ। জনগণ যত দিন চাইবে ক্ষমতায় থাকব। মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য যত চক্রান্ত আর বাধা আসুক আমরা বিজয় নিয়ে আসি। এখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে। ১৫ বছর আগে বাংলাদেশ কেমন ছিল। এই সময়ে কি কোনো পরিবর্তন হয়নি?

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আরও অনেক দেশেই তো নির্বাচন হচ্ছে। আমরা অবজারভার টিম পাঠাব, দেখি কেমন নির্বাচন হয়। সেখানকার মানুষ কী রকম ভোট দেয় আমরা দেখব। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে, আস্তে আস্তে এ প্রক্রিয়াটাকে আরও গণমুখী করা, আরও স্বচ্ছ করা। এই প্রথম আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ওপর। সেখান থেকেও মুক্ত করে তাদের সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি, বাজেটে আলাদা বাজেট দিয়ে দিচ্ছি।

উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের স্বজনদের অংশ না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না, এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী। আপনারা হিসাব করেন, কজন ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রী দাঁড়িয়েছে? এর বাইরে তো আর পরিবার ধরা হয় না। তিনি বলেন, আমাদের কথা হচ্ছে, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যাতে হয়। মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। আওয়ামী লীগ যেহেতু আমরা করি, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায়... যিনি এমপি হয়েছেন, তার বউ আগে থেকে নির্বাচন করে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে আছেন। এখন তাদের আমরা মানা করি কী করে! তবে এটা ঠিক যে, এক জায়গায় বউকে দিল, এক জায়গায় ছেলেকে দিল এগুলো আসলে ঠিক না। কর্মীদেরও মূল্যায়ন করা উচিত। আমি সেটাই বলতে চেয়েছি নেতা-কর্মীদের। সব কিছু নিজেরাই নিয়ে নেব, আর নেতা-কর্মীদের জন্য কিছু রাখব না, এটা তো হয় না। সে কথাটাই আমি বলতে চেয়েছি। আর যাতে কেউ প্রভাব বিস্তার না করে। রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। থাইল্যান্ডও আশ্বাস দিয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রত্যাবাসন নিয়ে সহযোগিতা করবে। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন। থাইল্যান্ডও মিয়ানমারের বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে।

থাইল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান আরও বলেন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারির নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। তা ছাড়া ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান করেছি। আমরা হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক জোনে তাদের জায়গা দেব। তিনি বলেন, আমাদের অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীরা সহজে থাইল্যান্ডে যেতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সহজে পণ্য রপ্তানি-আমদানি করতে পারব। ব্যবসাবাণিজ্য, থাইল্যান্ড যেহেতু পর্যটন ক্ষেত্রে অগ্রগামী সেই অভিজ্ঞতাটাও আমরা নিতে পারি। সেখানে বিনিয়োগ করতে পারবে, আমরা জায়গাও দিতে পারব। পাশাপাশি আমাদের যে ৮০ মাইল লম্বা বালুকাময় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত রয়েছে, সেখানেও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছি। সেখানে জায়গা চাইলে আমরা দেব।

আবহাওয়াসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গরম পড়াটা কিন্তু খুব নতুন কিছু না। এর আগেও কিন্তু এ হিটস্ট্রোক হয়েছে এবং সব সময় হয়। তবে সাধারণত বৈশাখে কালবৈশাখি হতো, এবার কালবৈশাখিটা পিছিয়ে গেছে। যার জন্য প্রচ- গরম। এখন প্রকৃতির সঙ্গে তো কিছু বলার নেই। পাশাপাশি আবার যেহেতু এ গরমের জন্য হিমালয়ের বরফ গলছে, পানিও আসছে। যেসব নদীতে পানি থাকত না, তিস্তায় কিন্তু প্রায় দ্বিগুণ পানি আছে এখন।

ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কোনো বিক্ষোভের আয়োজন করা হবে কি না-জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দাঁড়াচ্ছে। আমরা সব সময় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আছি। যেখানেই যাই আমার কথা আমি বলবই। যেভাবে গণহত্যা চলছে এটা অমানবিক। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের দমনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা নাকি গণতন্ত্রের একটা অংশ, সেটাও আমাদের শুনতে হয়! যেভাবে একজন প্রফেসরকে ধরে মাটিতে ফেলে গ্রেফতার করা হলো, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পরপরই যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর বিএনপির সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী অত্যাচার করেছিল, এটা সেই অত্যাচারের কথাই মনে করিয়ে দেয়। তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) কাছ থেকে আবার মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়, সবক নিতে হয়! এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চৌদ্দদলীয় জোটের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। এমনকি অনেকে বলছেন, চৌদ্দ দল থাকবে না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, চৌদ্দ দল তো অবশ্যই আছে। থাকবে না কেন? তাদের সঙ্গে আমাদের সব সময়ই যোগাযোগ আছে। যোগাযোগ নেই তা তো না। এখন দু-চার জন বিক্ষিপ্তভাবে কী বলছেন আমি জানি না। আমাদের যিনি সমন্বয় করেন, আমির হোসেন আমু সাহেবের ওপর দায়িত্ব দেওয়া আছে দলের পক্ষ থেকে। তিনি যোগাযোগ রাখেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে চৌদ্দ দলের অনেকে প্রার্থী দিয়েছিল, নির্বাচন করেছে, আর নির্বাচনে জেতা না জেতা আলাদা কথা। কিন্তু আমাদের এই জোট থাকবে। এটুকু বলতে পারি, জোট শেষ হয়ে গেছে কে বলল?

‘শিগগিরই’ চৌদ্দ দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কার্যনির্বাহী বৈঠক করেছি, আমাদের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করব এবং আমি চৌদ্দ দলের সঙ্গেও বসব। তা ছাড়া অনেকের সঙ্গে আমার নিজেরও যোগাযোগ আছে। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবার বড় আকারে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের পঁচাত্তর বছর উদ্যাপন করব খুব ব্যাপকভাবে। সেখানে আমরা আলোচনা করছি, বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা দেখব কোন কোন দেশকে আমরা আমন্ত্রণ জানাতে পারি বা কারা আসতে পারে সেটাও আমাদের আলাপ-আলোচনায় আছে। সে বিষয়েও আমরা কর্মসূচি নিচ্ছি। আমরা বিভিন্ন উপকমিটি করে দিচ্ছি। কারণ আমাদের দল উপমহাদেশে একটা বড় দল, যেটা ৭৫ বছর উদ্যাপন করছে, এটা তো কম কথা না। মেট্রোরেলের রক্ষণাবেক্ষণে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা জিনিস তৈরি (মেট্রোরেল) করে দিয়েছি, সেটাকে রক্ষণাবেক্ষণ, যত্ন নেওয়া জনগণের দায়িত্ব। এটা তো তাদেরই দেখতে হবে। তারা নিজেরা যদি যত্নবান না হয়, তাহলে কত আর শেখানো যাবে। যা তৈরি করে দিয়েছি, তার যত্ন নিলে মানুষ সুফল পাবে বা পাচ্ছে। রাজধানীর ফিটনেসবিহীন বাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেসরকারি বাসমালিকরা যদি ভাঙাচোরা বাস চালাতে পছন্দ করেন, তাহলে আমাদের কী করার আছে। ফিটনেস আছে কি না সেটা দেখার বিষয় আছে। কৃষকের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে সমবায়ের ভিত্তিতে জমি চাষাবাদ এবং ফসল বাজারজাতকরণের সুযোগ রেখে ২০২০ সালে ‘জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালা’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এ ব্যবস্থায় কৃষকের জমি নিয়ে নেওয়া হবে এমন ‘আস্থাহীনতা’র প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা ডিজিটালাইজড করে ফেলেছি, যার জমি তারই থাকবে। কৃষকের জমি কখনো নেওয়া হবে না।

সর্বশেষ খবর