শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী

দলকে কুক্ষিগত করলে ভবিষ্যতে পরিবার নিয়েই থাকতে হবে

রফিকুল ইসলাম রনি

দলীয় এমপিদের সতর্ক করে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দলকে কুক্ষিগত না করে সবাইকে সুযোগ দিতে হবে। এমপিদের উচিত তাদের সন্তান-স্ত্রীদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী না করা। পরিবারকেন্দ্রিক করলে চলবে না। এখন দলকে পরিবারকেন্দ্রিক করলে ভবিষ্যতে পরিবার নিয়েই থাকতে হবে। দলকে বৃহত্তর স্বার্থে বড় করতে হবে। ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সুযোগ করে দিতে হবে। গত রাতে সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দলের অন্য যারা আছে, যারা দলের জন্য কাজ করে সবাইকে সুযোগ করে দেওয়া উচিত। সব কিছু নিজের পরিবারের মধ্যে রাখা যাবে না, একাই সব জায়গায় থাকার মানসিকতা ছাড়তে হবে। আওয়ামী লীগ পরিবারকে বড় করতে হবে, দলকে কুক্ষিগত, সংকীর্ণ করে রাখলে হবে না। তিনি বলেন, যারা পরিবার-পরিজনদের উপজেলা ভোটে দাঁড় করিয়েছেন, তাদের ভবিষ্যতে পরিবার-পরিজন নিয়েই থাকতে হবে। কারণ নেতা-কর্মীদের তো একটা জায়গা দরকার। তারা সম্মান চায়। এখন নেতা-কর্মীদের ছেড়ে না দিলে সামনে তারাও ভোট দেবে না। নির্বাচনে যেন কোনো সমস্যা না হয়, নির্বাচনটা যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমি শুনেছি কিছু স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ঝামেলা করছে। আমি স্বতন্ত্র সদস্যদের সঙ্গেও বসব, তাদের সঙ্গেও কথা বলব। সূত্র আরও জানান, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে না জড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, গত নির্বাচনে যারা স্বতন্ত্রদের পক্ষে ছিল তাদের ওপর দলের এমপির লোকেরা চড়াও হচ্ছে। আবার স্বতন্ত্র যারা এমপি রয়েছেন, তারা দলের প্রার্থীর পক্ষে যারা ছিল তাদের ওপর চড়াও হচ্ছে। স্বতন্ত্ররা আমার অনুমতি নিয়েই ভোট করেছিল। স্বতন্ত্ররা যারা ঝামেলা করছে, আমি তাদের সঙ্গেও বসব। তিনি বলেন, এ ধরনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল বন্ধ করতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারা ভোট করেছে। অনেকে নির্বাচিত হয়েছে, অনেকে পারে নাই। কিন্তু এ নিয়ে সংঘাত-সহিংতা মেনে নেওয়া হবে না। দলের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো ধরনের সহিংসতা দেখতে চান না জানিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্থিতিশীলতার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা জরুরি। দেশকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন স্থিতিশীল পরিবেশ। সেই পরিবেশের জন্য সংসদ নেতা হিসেবে সবার সঙ্গে বসব।

 

তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় সেজন্য সংসদ সদস্যদের তদারকি করতে হবে। আমরা যে উন্নয়ন করেছি তার সুফল যাতে জনগণ পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। খাদ্য উৎপাদনের ওপর আবারও তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একখন্ড জমিও ফেলে রাখা যাবে না।

দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, উন্নয়নের পূর্বশর্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমি এ বিষয়টি নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য, অন্য দলের সংসদ সদস্য ও অন্যান্য দলের সঙ্গে কথা বলব। এসব বিষয় নিয়ে আমি তাদের সঙ্গে বসব।

একজন এমপি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, নেত্রী আপনি উপজেলায় একক প্রার্থী ঠিক করে দেন। খুব ঝামেলা হচ্ছে। দলের ভিতরে গ্রুপিং বাড়ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী কোনো উত্তর দেননি। সেই এমপি আবারও বলেন, কিছু কিছু জায়গায় প্রশাসনের লোকজন প্রার্থী দাঁড় করাচ্ছে। তারা আমাদের গুরুত্ব দিতে চায় না। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তোমরা যদি তাদের কাছে যাও, কোনো দুর্বলতা থাকে তাহলে প্রশাসন কেন তোমাদের কথা শুনবে? তাহলে পেয়ে বসবে। দলের সাধারণ সম্পাদককে বক্তব্য দিতে বললেও তিনি কোনো কথা বলেননি।

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এবং হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য দেন শামীম ওসমান, গোলাম দস্তগীর গাজী, সুলতানা নাদিরা, সালাউদ্দিন মিয়াজী, মো. মোহিত উর রহমান শান্ত, ফরিদুল হক খান, দ্রৌপদী দেবী আগারওয়ালা, ফারজানা সুমি, অণিমা মুক্তি গোমেজ প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর