শিরোনাম
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুই আসনে লড়ছেন রাহুল গান্ধী

আমেথিতে কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী কিশোরী লাল শর্মা

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

লোকসভা (সংসদের নিম্নকক্ষ) নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে ভোট গ্রহণ করা হবে ২০ মে। এ নির্বাচনে অবশেষে উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কংগ্রেস রাহুল গান্ধীকে মনোনীত করেছে। কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি রায়বেরেলিতে লড়লেও আরেক গুরুত্বপূর্ণ আসন আমেথি থেকে গান্ধী পরিবারের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। ওই আসনে প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ কিশোরী লাল শর্মা। শুক্রবার ছিল এ দুই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। তার আগে এদিন সকালে এ কেন্দ্র দুটিতে প্রার্থী ঘোষণা করে কংগ্রেস।

গত কয়েকদিন ধরেই রায়বেরেলি ও আমেথি- এ দুই আসনে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে প্রার্থী করা হতে পারে বলে জোর জল্পনা ছিল। দলের তরফ থেকেও তাদের উভয়কেই আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা চলমান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি হননি, পরিবর্তে প্রার্থীদের সমর্থনে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। ফলে রাহুল গান্ধীই ছিল তাদের তুরুপের তাস। সেক্ষেত্রে আবার আমেথি থেকে প্রার্থী হতে নারাজ ছিলেন রাহুল গান্ধী। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাহুল গান্ধী আমেথি আসনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে ৫৫ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত হন। তবে সেবার কেরালার ওয়েনাড আসনে সিপিআই প্রার্থী পিপি সুনিরকে ৪ লাখ ৩১ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। তাই, এবার নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের জন্য স্মৃতি ইরানির মুখোমুখি হতে চাননি রাহুল। ওয়েনাডের পাশাপাশি দ্বিতীয় আরেকটি আসনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন রাহুল। স্বাভাবিকভাবেই উত্তরপ্রদেশের এ দুই আসনে প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে সময় নিচ্ছিল কংগ্রেস। এ পরিস্থিতিতে স্মৃতি ইরানিও রাহুলকে কটাক্ষ করে বলতে শোনা গিয়েছিল রাহুলজি ভয়ে কেরালা রাজ্যের ওয়েনাড পালিয়ে গেছেন। মা সোনিয়া গান্ধীর ছেড়ে যাওয়া রায়বেরেলি আসনে প্রার্থী হন রাহুল। ২০০৪, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে পরপর তিনবার ওই আসনটিতে জিতেছিলেন সোনিয়া। এমনকি শেষবার ২০১৯ সালের নির্বাচনে দেশজুড়ে কংগ্রেসের অত্যন্ত খারাপ ফলের মধ্যেও তিনি এ আসনটি নিজের দখলে ধরে রাখতে পেরেছিলেন। এ কেন্দ্র থেকেই প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারও আগে ইন্দিরার স্বামী ফিরোজ গান্ধীও ১৯৫২ সালে এ কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন সোনিয়া গান্ধী। পরিবর্তে রাজস্থান থেকে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন সোনিয়া। সেক্ষেত্রে মায়ের ছেড়ে যাওয়া আসনটিতে এবার তারই কন্যা প্রিয়াঙ্কা লড়তে পারেন বলে জল্পনা ছিল। সেক্ষেত্রে এটাই হতো তার প্রথম নির্বাচনি লড়াই। কারণ ২০১৯ সালের নির্বাচনে বারাণসী আসনে মোদির বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কার দাঁড়ানোর জল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। কিন্তু এবারও নির্বাচনে দাঁড়ানোর অনিচ্ছা প্রকাশ করেন প্রিয়াঙ্কা। ১৯৬৭ সালে আমেথি লোকসভার আসন এলাকা হিসেবে গঠন হওয়ার পর থেকেই কংগ্রেসের কাছে শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। ১৯৭৭ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর ছোট  ছেলে সঞ্জয় গান্ধী প্রথমবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও হারতে হয়েছিল তাকে। যদিও ১৯৮০ সালে ওই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন সঞ্জয়। কিন্তু ১৯৮১ সালে বিমান দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর তার বড় ভাই রাজীব গান্ধী রাজনীতিতে যোগদান করেন এবং ওই বছরই আমেথি থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন তিনি। এরপর ১৯৮৪, ১৯৮৯ এবং ১৯৯১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন রাজীব গান্ধী। ১৯৯৯ সালে আমেথি আসনে প্রার্থী হন রাজীব গান্ধীর স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী। ২০০৪ সালে তিনি ‘আমেথির বদলে উত্তরপ্রদেশের ‘রায়বেরেলি’ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। এরপর সোনিয়ার ছেড়ে যাওয়া আমেথি আসনে লড়াই করে আসছেন ছেলে রাহুল গান্ধী। ২০০৪ সাল থেকে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন রাহুল। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে ১ লাখেরও বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু শেষবার ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এ আমেথি আসনে স্মৃতি ইরানির কাছে হেরে যাওয়ার পর থেকেই পরাজয়ের আতঙ্ক কাজ করে রাহুলের মধ্যে। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে-সহ অনেকেই তাকে অনুরোধ জানালেও রাহুল তার জেদে অনড় থাকেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর