বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
বাজারভিত্তিক সুদ কার্যকর

বেশি চাপে ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোগ

শাহেদ আলী ইরশাদ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণের বাজারভিত্তিক সুদহার চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খাতে ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য তহবিলের জোগান-সাপেক্ষে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। এ ছাড়া ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ঋণের খাতভিত্তিক সুদের হার ঘোষণা করবে এবং তুলনামূলক ঝুঁঁকি বিবেচনায় গ্রাহকভেদে ঘোষিত হার অপেক্ষা ১ শতাংশ কম বা বেশি হারে ঋণ দিতে পারবে। গতকালই এ সুদহার কার্যকর করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে এ উদ্যোগে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বিপাকে পড়বেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, দেশের অর্থনীতির বড় সমস্যা নীতি ও বাস্তবায়নের মিল না থাকা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকা সরবরাহ কমাতে দেশের ব্যাংক খাতে সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এর আগে চালু করা স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) সুদহার প্রত্যাহার করে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মোতাবেক বাজারভিত্তিক সুদহার চালু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘আমরা বাজারভিত্তিক সুদহার বাস্তবায়নের বিষয়টি চিন্তা করছি। সুদহারের আর কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না। ব্যাংকগুলো স্বাধীনভাবে চাহিদা ও  সরবরাহের ওপর নির্ভর করে সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে।’ বিশ্লেষকরা বলেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বিপাকে পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য। যার প্রভাব পড়বে উৎপাদন এবং কর্মসংস্থানে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি সব সময় ছোট ও মাঝারি ব্যবসাকে কঠিন করে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমনিতেই ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে চায় না। এই কাগজ, সেই কাগজ, ডান দিকে সই কর, বাম দিকে সই কর, এক মাস পরে আসো। কোনো দিন না করে দেয় না, বলে না তোমাকে ঋণ দেব না। সংকোচনমূূলক মুদ্রানীতি হলে ঋণ দেবেই না। এখন আমাদের উচিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দিকে বেশি নজর দেওয়া।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সুদহার বাজারভিত্তিক এবং বিনিময় হার আরও নমনীয় করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেতে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ের কোনো যেন প্রশ্ন না থাকে, সে জন্য দ্রুততম সময়ে সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কার্যকর হওয়ার ফলে ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে ঋণ ও আমানতের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। তবে ঋণ ও আমানতের মধ্যে সুদহারের সর্বোচ্চ ব্যবধানের একটি সীমা আগের মতো বেঁধে দেওয়া হতে পারে। ঋণের সুদহার  নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ঋণের খাতভিত্তিক সুদের হার ঘোষণা করবে এবং তুলনামূলক ঝুঁঁকি বিবেচনায় গ্রাহকভেদে ঘোষিত হার অপেক্ষা ১ শতাংশ কম বা বেশি হারে ঋণ দিতে পারবে। ঋণের মঞ্জুরিপত্রে এই ঋণের সুদহার অপরিবর্তনশীল বা পরিবর্তনশীল তা উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো ঋণের সুদহার পরিবর্তনশীল হলে তা বছরে সর্বোচ্চ কতবার বৃদ্ধি করা হবে এবং ওই বৃদ্ধি কত শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তা অবশ্যই মঞ্জুরিপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো ঋণ অথবা ঋণের কিস্তি সম্পূর্ণ বা আংশিক মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হলে তা যে সময়ের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, ওই সময়ে চলমান ঋণ/তলবি ঋণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ঋণ স্থিতির ওপর এবং মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ওপর সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ শতাংশ দন্ডসুদ আরোপ করা যাবে।

সর্বশেষ খবর