শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের যাবজ্জীবন

২৫ বছর পর রায় - চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনসহ ছয়জন খালাস ♦ সাক্ষীরা গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন পর্যবেক্ষণে বিচারক

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের যাবজ্জীবন

২৫ বছর আগে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার ঘটনায় করা মামলার রায়ে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সাক্ষ্যে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনসহ ছয়জনকে খালাস দিয়েছেন। গতকাল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্ত্তী এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি হলেন হত্যার ঘটনাস্থল ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। দন্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা করে অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। দন্ডিত এ তিন আসামি পলাতক রয়েছেন। আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারিসহ সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন।

সন্ত্রাসী ইমন বাদে খালাস পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন তারেক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, ফারুক আব্বাসী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিস রায়চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী। রায় ঘোষণার আগে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। আসামি আশিস রায় জামিনে থেকে হাজিরা দেন। অন্য আসামিরা পলাতক ছিলেন। মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অরুণাভ চক্রবর্ত্তী বলেন, সাক্ষীরা গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীদের মধ্যে পক্ষপাতদুষ্টতা ছিল। অনেক সাক্ষী মারাও গেছেন। দীর্ঘকাল একটা মামলার বিচার চলতে পারে না। প্রতিটি মৃত আত্মাই যথাযথ বিচার চায়। জানা যায়, চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন ওই সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতিকে। বিয়ের কিছুদিন পর তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সোহেল চৌধুরী, জড়িয়ে পড়েন নেশার জগতে। এরই ধারাবাহিকতায় সেই অন্ধকার জগতের অপরাধীদের সঙ্গে শুরু হয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বের রেশ ধরেই অবসান ঘটে তার জীবনের। বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম বেপারী নয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালতসূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন। এর দুই বছর পর মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই সময় আসামিদের মধ্যে একজন হাই কোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রথমে তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন হাই কোর্ট। এরপর ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এর ১১ বছর পর ২০১৫ সালে ওই রুলের নিষ্পত্তি হয় এবং পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। মামলাটির বিচার চলাকালে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

সর্বশেষ খবর