প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন পরিকল্পনা পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ জলবায়ুর অভিঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য।

গতকাল সকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ-আইইবির ৬১তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আইইবি ঢাকা সেন্টার রাজধানীতে আইইবি সদর দফতরে ‘প্রকৌশল ও প্রযুক্তির জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ’ মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। শেখ হাসিনা বলেন, বিত্তশালীরা কেবল নয়, আমি চাই আমার রিকশাওয়ালা, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষসহ দিনমজুররাও ফ্লাটে থাকবে। আমার প্রত্যেকটি কাজ হচ্ছে এই তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত প্রকৌশলীদের যৌক্তিক দাবিগুলো দেশের উন্নয়নে তাদের অবদানের কথা মাথায় রেখেই তিনি যাচাইবাছাইপূর্বক পূরণের ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্তরের প্রকৌশলী, কেন্দ্র, উপকেন্দ্র, প্রকৌশল বিভাগ এবং এএমআইই পরীক্ষার স্নাতকদের হাতে স্বর্ণপদক ও সনদসহ পুরস্কার তুলে দেন।  আইইবি সভাপতি মো. আবদুস সবুর এমপি, আইইবি সাধারণ সম্পাদক এস এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেইন ও আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আইইবির ৬১তম কনভেনশনের থিম সং-এর পাশাপাশি একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূল থেকে উন্নয়নই আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য। সম্পদের সীমাদ্ধতা মাথায় রেখে কীভাবে উন্নয়ন সচল রাখা যায় সেদিকে প্রকৌশলীদের লক্ষ্য রাখতে হবে। এ ছাড়া যে কোনো প্রকল্প সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই হওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিজস্ব বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নকে দ্রুততর করতে আলোচনার মাধ্যমে কৌশল ঠিক করুন, যাতে আমরা দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

সরকারপ্রধান বলেন, আমি অবাক হয়ে যাই আমাদের দেশের কিছু কিছু মানুষ আছেন আপনি যাই করেন, কিছুই তাদের ভালো লাগে না। ‘কিছু ভালো লাগে না’ একটা গোষ্ঠীই রয়েছে। যেমন- কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগের কী দরকার ছিল বা স্যাটেলাইট-২ এরই বা প্রয়োজন কী আছে? পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র কেন করা হলো? শুধু শুধু টাকা নষ্ট। মেট্রোরেলের তো প্রয়োজনই ছিল না। ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মেট্রোরেল না করে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করলেই তো যানজট দূর হয়ে যেত। তিনি এ সময় বিশ্বব্যাংকের ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করে তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের উল্লেখ করে বলেন- অনেকেই বলেছিলেন, বিশ্বব্যাংক ছাড়া হবে না। কিন্তু আমরা নিজের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি যে আমরাও পারি। জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে কিছু ভালো লাগে না গোষ্ঠীর এগুলো সফলভাবে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় পরে মানুষের জীবনযাত্রা আরও সহজ হয়ে যাওয়ায় তাদের কী অসুবিধা হচ্ছে, তারা কি এর সুবিধা ভোগ করছেন না? সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। তিনি বলেন, দেশে এখন ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে; যা আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে চাই। সে ক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের প্রকৌশলীদেরও গবেষণা দরকার। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বহুমুখী করেছি, আগামীতে আরেকটি দিক আসছে হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও আমাদের গবেষণা দরকার। একই সঙ্গে স্বল্প খরচে টেকসই যন্ত্রপাতি নির্মাণ, স্থাপনা নির্মাণ ও মেরামতেও গবেষণা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৌশল ক্ষেত্রে আরও বেশি গবেষণা করে আপনাদের যে উদ্ভাবনী শক্তি ও মেধা রয়েছে সেটাকে কীভাবে আমরা দেশের কাজে লাগাতে পারি সে দিকে আপনারা বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। কারণ, আমাদের সবকিছুই নির্মাণের দায়িত্ব পড়ে প্রকৌশলীদের ওপর। তিনি বলেন, এখানে প্রশাসন থেকে প্রকৌশলী এমনকী সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। যার জন্য আজ ২১টি জেলা এবং ৩৩৪টি উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীণমুক্ত ঘোষণা দিতে পেরেছি। ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশে একটি পরিবারও ভূমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না।  জাতির পিতার কন্যা বলেন, আমরা প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নিচ্ছি বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিক উন্নতি করে উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে। সেখানে মূল চালিকাশক্তি হবেন আমাদের প্রকৌশলীরা। কাজেই আপনাদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের। সেটা আমরা করব।