শিরোনাম
রবিবার, ১২ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

জেল থেকে বেরিয়ে কেজরিওয়ালের হুঁশিয়ারি

কলকাতা প্রতিনিধি

জেল থেকে বেরিয়ে কেজরিওয়ালের হুঁশিয়ারি

জামিনে কারামুক্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বিজেপি ফের ক্ষমতায় এলে বিরোধীদলীয় সব নেতাকে কারাগারে নিয়ে শেষ করে দেবে। আবগারি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত কেজরিওয়াল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুক্রবার অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তি পাওয়ার ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, নরেন্দ্র মোদি আম আদমি পার্টি (আপ)-কে গুঁড়িয়ে দিতে চাইছেন। তাই তিনি একের পর এক আম আদমি পার্টির চারজন নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। শনিবার সকালে স্ত্রী সুনিতা কেজরিওয়ালকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে দিল্লির কনটপ্লেসে অবস্থিত হনুমান মন্দিরে যান অরবিন্দ, সঙ্গে ছিলেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান, আপের রাজ্যসভার সদস্য সঞ্জয় সিং, দিল্লির ক্যাবিনেট মন্ত্রী অতিশী। পরে আপের সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে ‘একনায়ক’ আখ্যায়িত করে কেজরিওয়াল বলেন, ঝাড়খন্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, মমতা ব্যানার্জির দলের মন্ত্রীরা এখন কারাগারে। বিজেপি যদি ফের ক্ষমতায় আসে তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরেসহ অন্য বিরোধী নেতাদের কারাগারে পুরবে। তাছাড়া কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে তারা (বিজেপি) একটা বার্তা দিয়েছে যে, যদি কেজরিওয়াল গ্রেফতার হতে পারেন তবে অন্য কোনো নেতাকেও তারা গ্রেফতার করতে পারে। এই মিশনের নামই হলো ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান লিডার’ (এক দেশ, এক নেতা)। কেজরিওয়াল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। কিন্তু দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত কয়েকজনকেই তিনি তার দলে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি যাদের দুর্নীতিবাজ বলতেন, পরবর্তীতে সেই মানুষগুলোকেই কোথাও উপ-মুখ্যমন্ত্রী, আবার কোথাও মন্ত্রীর পদে বসিয়েছেন।’ কেজরিওয়ালের মনে হচ্ছে আগামী ৪ জুন বিজেপি ক্ষমতায় আসবে না। তিনি বলেন, ইন্ডিয়া জোটই সরকার গঠন করবে এবং আপ সেই সরকারের অংশীদার হবে।  প্রধানমন্ত্রী মোদির বয়স নিয়েও কটাক্ষ করেন আম আদমি পার্টির (আপ) জাতীয় আহ্বায়ক কেজরিওয়াল। তার প্রশ্ন, ‘বিজেপি ইন্ডিয়া জোটের দলগুলোকে জিজ্ঞাসা করে যে তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কে হতে চলেছেন। আমি বিজেপিকে জিজ্ঞাসা করতে চাই তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কে? ২০২৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে মোদি ৭৫ বছরে পা দেবেন। মোদিই একটা সময় নিয়ম করেছিলেন যে ৭৫ বছর হলেই দলের নেতাদের অবসর নিতে হবে। লালকৃষ্ণ আদভানি, মুরলি মনোহর যোশী, সুমিত্রা মহাজন, যশবন্ত সিনহা সবাই অবসর নিয়েছেন। এবার ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদি অবসর নিতে চলেছেন।’  কেজরিওয়ালের মন্তব্যের পরই তাকে নিশানা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, ক্যাবিনেট মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশ্বাস : তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদি ফের ক্ষমতায় আসছেন। এদিন হায়দরাবাদে সংবাদ সম্মেলনে অমিত শাহ বলেন ‘মোদিজি ৭৫ বছরে পা দিচ্ছেন বলে কেজরিওয়াল এবং ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের অত উৎসাহী হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিজেপির সংবিধানে কোথাও লেখা নেই যে মোদি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তিনি ফের প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং এই পদে পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন করবেন।’

বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘মোদিজির বয়সের অজুহাত দেখিয়ে বিরোধীরা এখন পালানোর পথ খুঁজছে। বিজেপির গঠনতন্ত্রে কোথাও বয়সসংক্রান্ত এমন কোনো বিধান নেই। মোদিজি আমাদের নেতা এবং ভবিষ্যতেও আমাদের নেতৃত্ব দেবেন।’

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেন, এই অরবিন্দ কেজরিওয়াল কে? তিনি একজন দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা, যার দলের নেতারা কারাগারে। তারা সনাতন ধর্মকে গালিগালাজ দেয়। ৪ জুন জনগণ জবাব দেবে। সব বিরোধী দল হেরে যাবে। এবার আমরা ৪০০ ছাড়িয়ে যাব।

আগামী ২৫ মে ষষ্ঠ দফায় দিল্লির সাত লোকসভা আসনে ভোট নেওয়া হবে। আপের সব নেতাই প্রায় একমত যে, কেজরিওয়ালের জামিনে মুক্তি চলমান নির্বাচনে তাদের দল আপ এবং বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র কাছে একটা গেমচেঞ্জার হিসেবে দেখা দিতে পারে।  পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সপ্তগ্রামে এক নির্বাচনি প্রচারণা সভায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘মোদিরা এবার ক্ষমতায় আসছে না নিশ্চিন্তে থাকুন। ওরা গেলে দেশ বাঁচবে।’  একসময় বিজেপিকে উৎখাতের ডাক দিয়ে মমতা বলেন, ‘৩৪ বছর লড়াই করে সিপিএমকে যদি ছুড়ে ফেলতে পারি, তবে লড়াই করে আপনাকেও ভারত থেকে ছুড়ে ফেলে দেব। আমাকে ধমকে চমকে কাজ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘একটা করে দফা শেষ হবে, মোদিবাবু তুমি একটু করে ধসবে। তিনটে দফার ভোট শেষ হয়েছে। প্রথম দফায় মাইনাস-এ পেয়েছ, দ্বিতীয় দফায় জিরো পেয়েছো, তৃতীয় দফায় চোখের পানি পড়তে শুরু করেছে। চতুর্থ দফার ভোট আসছে। বাংলা ভুলে যাও! তোমার দিল্লি, পাঞ্জাব, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশে কী হবে? দক্ষিণ ভারত তো ছেড়েই দিলাম। ওখানে তুমি রসগোল্লা পাবে। উত্তর-পূর্ব ভারতে তো একটাও পাবে না। তাহলে সরকারটা তুমি কীভাবে গঠন করবে? ওরা বলছে ইসবার ৪০০ পার। আমি বলি ইসবার এপার, ওপার, পগার পার।’

উল্লেখ্য, ভারতের সাত দফা লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণ সোমবার ১৩ মে।

পঞ্চম দফা ২০ মে, ষষ্ঠ দফা ২৬ মে এবং সপ্তম ও শেষ দফার ভোট ১ জুন। গণনা ৪ জুন।

সর্বশেষ খবর