রবিবার, ১২ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

চলে গেলেন হায়দার আকবর খান রনো

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলে গেলেন হায়দার আকবর খান রনো

প্রবীণ রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আকবর খান রনো শুক্রবার দিবাগত রাত ২টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। একমাত্র মেয়ে রানা সুলতানাসহ বিপুলসংখ্যক আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভাকাক্সক্ষী রেখে গেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা রনোর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসতন্ত্রের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন হায়দার আকবর খান রনো। ৬ মে পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে রেখে। সেখানেই মধ্যরাতে তাঁর জীবনাবসান। তাঁর মৃত্যুতে আগামীকাল শোক দিবস ঘোষণা করে সিপিবি জানায়, পরিবারের সদস্যরা দেশের বাইরে থাকায় হায়দার আকবার খান রনোর মরদেহ শমরিতা হাসপাতালের মর্গে রাখা হবে। শেষবিদায় জানানো হবে সোমবার। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মরদেহ থাকবে পল্টনে সিপিবি কার্যালয়ে, সেখান থেকে শোক শোভাযাত্রা যাবে শহীদ মিনারে। সেখানে ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শ্রদ্ধানিবেদন পর্ব চলবে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে। সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষু ব্যাংকে মরণোত্তর চক্ষু দান করে গেছেন হায়দার আকবর খান রনো। সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল সকালে রনোর চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ দেশের বিশিষ্ট কর্নিয়াল সার্জন ডা. সৈয়দ এ হাসান দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দুই অন্ধের চোখে রনোর কর্নিয়া সংযোজন করবেন। হায়দার আকবর খান রনোর জন্ম ১৯৪২ সালের ৩১ আগস্ট কলকাতায়। তাঁর পৈতৃকনিবাস নড়াইলের বরাশুলা গ্রামে। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্র থাকাকালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে। নব্বইয়ের দশকের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনসহ এরশাদ পতনের গণ অভ্যুত্থানের সংগঠক ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকলেও ২০১০ সালে মতভিন্নতার কারণে এ দলটি ছেড়ে সিপিবিতে যোগ দেন রনো। ২০১২ সালে তাঁকে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। এরপর সিপিবির উপদেষ্টা হন। রাজনীতিকের পরিচয়ের বাইরে তিনি ছিলেন একজন তাত্ত্বিক ও লেখক। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৩। ২০২২ সালে তিনি লাভ করেন মর্যাদাপূর্ণ ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’। হায়দার আকবর খান রনোর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, কানাডাস্থ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিত্বরা।

সর্বশেষ খবর